সোমবার, ২৩শে জুলাই, ২০১৮ ইং ৮ই শ্রাবণ, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

অবশেষে রাইফার মৃত্যুর ঘটনায় মামলা নিলো পুলিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক : শিশু রাফিদা খান রাইফাথানায় অভিযোগ দায়েরের তিন দিনের মাথায় অবশেষে সাংবাদিক কন্যা রাফিদা খান রাইফার মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা এজহারটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করেছে চকবাজার থানা পুলিশ। শুক্রবার (২০ জুলাই) বিকাল ৪টার দিকে অভিযোগটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হয়। চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে বুধবার (১৮ জুলাই) বিকাল ৪টায় চট্টগ্রাম নগরীর চকবাজার থানায় অভিযোগ দায়ের করেন নিহত রাইফার বাবা রুবেল খান। অভিযোগপত্রে ভুল চিকিৎসা ও কর্তব্যরত চিকিৎসকদের অবহেলায় রাইফার মৃত্যু হয়েছে দাবি করে ম্যাক্স হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. লিয়াকত আলীসহ চারজন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আনা হয়।

আবুল কালাম আজাদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রাইফার মৃত্যুর ঘটনায় তার বাবা রুবেল খানের দায়ের করা অভিযোগটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। মামলায় ম্যাক্স হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও তিন চিকিৎসকের নাম উল্লেখ এবং হাসপাতাল পরিচালনায় সংশ্লিষ্টদের আসামি করা হয়েছে।’

আসামিরা হলেন–হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. লিয়াকত আলী, শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বিধান রায় চৌধুরী, কর্তব্যরত ডা. দেবাশিষ সেনগুপ্ত ও ডা. শুভ্র দেব।

উল্লেখ্য, গত ২৮ জুন বিকালে গলা ব্যথার কারণে রাইফাকে ম্যাক্স হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন ২৯ জুন রাতে রাইফার মৃত্যু হয়। চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসার কারণে রাইফার মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করে তার পরিবার। এ ঘটনায় ওই দিন রাতে ম্যাক্স হাসপাতালে গিয়ে অভিযুক্ত কর্তব্যরত চিকিৎসক, নার্সদের শাস্তি দাবি করেন সাংবাদিক নেতারা। এসময় সাংবাদিক নেতাদের দাবির মুখে পুলিশ কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সদের আটক করে থানায় নিয়ে যায়। পরে বিএমএ নেতাদের চাপের মুখে ওই দিন রাতেই তাদের ছেড়ে দেয় থানা পুলিশ।

ঘটনা তদন্তে ওই দিন রাতে সিভিল সার্জন আজিজুর রহমান সিদ্দিকীকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অপর সদস্যরা হলেন– চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান ডা. প্রণব কুমার চৌধুরী ও চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম সম্পাদক সবুর শুভ।

গত ৬ জুলাই সিভিল সার্জনের নেতৃত্বাধীন কমিটি তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, শিশু রাইফা যখন তীব্র খিঁচুনিতে আক্রান্ত হয়, তখন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের অনভিজ্ঞতা ও আন্তরিকতার অভাব পরিলক্ষিত হয় এবং ওই সময়ে থাকা সংশ্লিষ্ট নার্সদের আন্তরিকতা থাকলেও, এ রকম জটিল পরিস্থিতি মোকাবেলা করার মতো দক্ষতা বা জ্ঞান কোনটাই তাদের ছিল না বলে উল্লেখ করা হয়। এতে আরও বলা হয় অভিযুক্ত শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বিধান রায় চৌধুরী মনোযোগ সহকারে পরীক্ষা করে দেখেননি। ডা. দেবাশিষ সেন গুপ্ত ও ডা. শুভ্র দেব শিশুটির রোগ জটিলতার বিপদকালীন সময়ে আন্তরিকতার সঙ্গে সেবা দেননি বলে শিশুটির পিতা-মাতা যে অভিযোগ করেছেন তা তদন্তে প্রতিয়মান হয়।

প্রতিবেদনে চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগে অভিযুক্ত তিন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করাসহ চার দফা সুপারিশ করা হয়।

একই ঘটনায় সাংবাদিকদের দাবির মুখ্য আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। স্বাস্থ্য মহাপরিচালকের কার্যালয়ের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) কাজী জাহাঙ্গীর হোসেনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের এই কমিটি গত রবিবার ঘটনা তদন্তে চট্টগ্রাম আসেন। এসময় তারা ম্যাক্স হাসপাতাল পরিদর্শন করেন।