বৃহস্পতিবার, ২৭শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ইং ১২ই আশ্বিন, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

রাজধানীর বাস দূরপাল্লায়, পরিবহন সংকটে নগরবাসী

নিউজ ডেস্ক: ঈদের আগের দিন আজ মঙ্গলবার রাজধানীর সিটি সার্ভিস বাসগুলো যেন হঠাৎ উধাও হয়ে গেছে। সিটি বাস সার্ভিসগুলোর দেখা নেই বললেই চলে। যেন ঈদের ছুটি কাটাতে নগরবাসীর সঙ্গে রাজধানীর বাসগুলো চলে গেছে গ্রামাঞ্চলে।

বাসস্টান্ডগুলোতেও পাওয়া যাচ্ছে না বাসগুলোর হদিস। ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থেকে হাতে গোনা দু’একটা বাসের দেখা মিললেও তাতে ভাড়া দ্বিগুণ থেকে চারগুণ। ঈদের অজুহাতে এসব বাড়তি ভাড়া নেয়া হচ্ছে, যেন দেখার কেউ নেই। ঈদের আগেরদিন মঙ্গলবার রাজধানীর বিভিন্ন স্থান ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঈদের অজুহাতে প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে বাড়তি লাভের আশায় বিভিন্ন জেলা ও বিভাগে দূরপাল্লার খেপ মারছে নগরীর বাসগুলো। মাঝে মাঝে দু-একটা যানবাহন দেখা গেলেও যাত্রীদের পকেট কাটছে কোনও আইনকানুন ও নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, মিরপুর ১০, ১১ ও ১২ থেকে ফার্মগেট-শাহবাগ-গুলিস্তানগামী বাসে যাত্রীদের গুণতে হচ্ছে নিয়মিত সাধারণ ভাড়ার দ্বিগুণ ৫০ টাকা। আর সদরঘাট পর্যন্ত ৬০ টাকা। উত্তরা থেকে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ নামের বাস সার্ভিসে উঠলেই গুণতে হচ্ছে ১০০ টাকা। অন্যান্য সময় উত্তরা থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত বাসটি ভাড়া রাখে ৩৫ টাকা। শুধু তাই নয় উত্তরা থেকে কুড়িল বিশ্বরোড নামলেও দিতে হচ্ছে একই ভাড়া।

উত্তরা থেকে কারওয়ান বাজার পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু এভিনিউ বাস সার্ভিসে এসেছেন জুয়েল বিশ্বাস। তিনি বলেন, অনান্য সময় ২৫ টাকা ভাড়া দিয়ে উত্তরা থেকে কারওয়ান বাজার আসি। কিন্তু আজ আমাকে গুণতে হলো ১০০ টাকা। খুব কষ্ট হলেও যানবাহন ঘাটতির কারণে রীতিমতো বাধ্য হয়েই দিতে হলো।

এছাড়া লোকাল সার্ভিস তুরাগে উঠলেই দিতে হচ্ছে ৫ থেকে ১০ টাকা বেশি। শুধু তাই নয় রাজধানীর প্রায় সব বাস সার্ভিসে দিতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়া।

এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন মোড়ে অপেক্ষমাণ যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও অনেকেই বাসের দেখা পাননি। কেউ কেউ আবার রিকশা, ভ্যানগাড়ি ভাড়া করে গন্তব্যস্থলে পৌঁছাচ্ছেন। তবে সেগুলোও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। ফলে নারী ও শিশুরা বিপদে পড়ছেন বেশি। দীর্ঘসময় পর বাসের দেখা পেলেও দরজা বন্ধ করে চলছে গাড়িগুলো। এছাড়া যেগুলোতে লোক নিচ্ছে সেগুলোতে ভিড়ের কারণে উঠতে পারছেন না অনেকে।

মঙ্গলবার দুপুরে শাহবাগ ও ফার্মগেটে দেখা যায়- প্রচুর মানুষ হেঁটে চলছেন। তাদের হাতে ও কাঁধে ছিল একাধিক ব্যাগ।
কামাল হোসেন নামের একজন ঘরমুখো মানুষ বলেন, ময়মনসিংহ যাব, কাঁঠালবাগানে বাসা। মহাখালী থেকে উঠতে হবে। চারটায় বাস। রাস্তায় জ্যামের কথা মাথায় রেখে ঘণ্টা দুয়েক আগে বের হয়েছি। কিন্তু রাস্তায় এসে সিএনজি-বাস কিছুই পাইনি। তাই হাঁটা শুরু করলাম। হেঁটে চলছি দেখি কতদূর যাওয়া যায়।

সকাল থেকেই রাজধানীর প্রধান সড়কগুলো অনেকটাই ফাঁকা। তবে ব্যতিক্রম দৃশ্য দেখা যাচ্ছে রাজধানী থেকে বের হবার পথ, টার্মিনাল, স্টেশনগুলোতে। সেখানে ঘরমুখো মানুষের ভিড় লেগেই আছে। গাবতলী, সায়েদাবাদ, মহাখালী বাস টার্মিনালে ৪-৫ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও বাসের দেখা পাননি অনেকে। আর যারা দেখা পেয়েছেন তারা মহাসড়কে পড়েছেন তীব্র যানজটে। তবে অগ্রিম টিকিট যারা কাটতে পারেননি তাদের গুণতে হচ্ছে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি টাকা।

কাজীপাড়া যানবাহনের জন্য অপেক্ষমাণ সাইফুল আলম বলেন, বাড়তি ভাড়া দিয়েও বাস পাওয়া যাচ্ছে না। দুই-একটা এলেও পারাপারি করে মানুষ দ্রুত ওঠার চেষ্টা করছে। যে রাস্তায় গাড়ির চাপের কারণে যানজট সৃষ্টি হয়, সেখানে সিটি সার্ভিসের কোনও বাসই নেই।

এ বিষয়ে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, ঈদ উপলক্ষে বাসের চালক ও হেলপাররা ছুটিতে যাওয়ায় অল্প সংখ্যক গাড়ি রাস্তায় বের হয়েছে। তাছাড়া ঈদে রাজধানীর বেশিরভাগ মানুষ গ্রামে চলে যাওয়ায় যাত্রীর সংখ্যাও কম থাকায় মালিকরা বেশি গাড়ি বের করতে দেয়নি। তবে কিছু কিছু বাস দূরপাল্লার রোডে গেছে এটিও সত্য। বাড়তি ভাড়া নেয়ার অভিযোগটি খতিয়ে দেখা হবে। আরটিভি অনলাইন