শুক্রবার, ৫ই অক্টোবর, ২০১৮ ইং ২০শে আশ্বিন, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

১০ শিক্ষার্থীর জন্য ৫ শিক্ষক!

ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার চন্দ্রা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম চলছে ১০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে। আর এই ১০ শিক্ষার্থীর জন্য নিয়োজিত রয়েছেন ৫ জন শিক্ষক। বুধবার দুপুরে বিদ্যালয়টিতে সরেজমিনে গিয়ে এ তথ্য জানা যায়।

প্রধান শিক্ষকের দেয়া তথ্যমতে, বিদ্যালয়টির প্রথম শ্রেণীতে ২ জন ছাত্রী, দ্বিতীয় শ্রেণীতে ১ জন ছাত্র ও ৩ জন ছাত্রী, তৃতীয় শ্রেণীতে ১ জন ছাত্র, চতুর্থ শ্রেণীতে ১ জন ছাত্রী, পঞ্চম শ্রেণীতে ২ জন ছাত্র ও ২ জন ছাত্রী মিলে ১২ জন কাগজে কলমে অধ্যয়নরত আছে।

এদের মধ্যে ২য় শ্রেণীর এক ছাত্রী অভিভাবক সহ ঢাকায় গিয়ে অবস্থান করছেন এবং সেখানে স্কুলে ভর্তি হয়েছেন। এছাড়াও ৫ম শ্রেণীর একজন শিক্ষার্থী কিছুদিন আগে ঢাকা চলে গেছেন বলে জানান বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। বিদ্যালয়টির মনিটরিং বোর্ডের তথ্যানুযায়ী প্রধান শিক্ষক হিসেবে মনজুর মোরশেদ, সহকারী শিক্ষক হিসেবে আফতারুল ইসলাম, মনোরঞ্জন রায়, ফাইজার রহমান, আজমেরী আক্তার নামে মোট ৫ জন শিক্ষক কর্মরত আছেন। ২০১২ সালে এই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা হয়।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, বিদ্যালয়টিতে মোট ১০ জন শিক্ষার্থী থাকলেও এইসব শিক্ষার্থীর অনেকেই নিয়মিত স্কুলে আসে না। আসলেও গল্প-আড্ডা করে স্কুল সময় কাটিয়ে দেন। অথচ সরকার তাদের জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় করছেন।

সহকারী শিক্ষক ফাইজার রহমান বলেন, ‘চন্দ্রা গ্রামে জনবসতি কম হওয়ায় এই গ্রামে শিক্ষার্থী পাওয়া যায় না। বর্তমানে ১০ শিক্ষার্থীকেই আমরা যত্ন সহকারে পড়াচ্ছি। শিক্ষার্থীরা নিয়মিত স্কুলে আসে।’

প্রায় একই রকম কথা জানিয়ে প্রধান শিক্ষক মনজুর মোরশেদ বলেন,‘শিক্ষার্থী বৃদ্ধির জন্য আমরা আশে-পাশের গ্রামের মানুষদের সাথে কথা বলছি। পাশের গ্রামগুলোর কিছু শিক্ষার্থী আমরা পাবো। আগামী বছরে আরও কিছু শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়বে।’

তবে এই প্রধান শিক্ষক আড্ডা দিয়ে সময় পার করার বিষয়টি অস্বীকার করেন। পরে এই প্রতিবেদক প্রধান শিক্ষককে সাথে নিয়ে বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলতে শ্রেণীকক্ষে যেতে চাইলে প্রধান শিক্ষক তাতে অসম্মতি জানান।

প্রধান শিক্ষকের ভাষ্য, ‘ক্লাসে যাওয়া যাবে না। সমস্যা আছে। ক্লাসের ভিতরে যাওয়ার দরকার নেই।’ শ্রেণীকক্ষে যাওয়া নিষেধ আছে।

কে নিষেধ করেছে ? -জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শিক্ষা অফিসের নিষেধ আছে। শ্রেণীকক্ষে ঢুকা যাবে না।’

এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার নজরুল ইসলাম বলেন, ‘স্কুল চলাকলীন অভিভাবকরা প্রধান শিক্ষক অথবা সহকারী শিক্ষকের অনুমতি নিয়ে শ্রেণীকক্ষে প্রবেশ করতে পারেন। আর সাংবাদিকদের প্রবেশে কোনো নিষেধাজ্ঞা বা কোন নির্দেশনাও নাই।’

তিনি আরও বলেন, ‘কমিউনিটি স্কুল থেকে জাতীয়করণ হয়ে বিদ্যালয়টি সরকারি হয়েছে। ওই এলাকায় জনবসতি কম হওয়ায় বর্তমানে শিক্ষার্থীও কম। আশা করছি শিক্ষার্থী বাড়বে।’

এদিকে, চন্দ্রা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রায় ২ কি. মি. দূরে ৬৮নং রণশিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় অবস্থিত।

ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজগর আলী জানান, তাদের মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৯৬ জন। প্রধান শিক্ষকসহ বর্তমানে ৫ জন শিক্ষক কর্মরত আছেন। সহকারি শিক্ষকের একটি পদ শুন্য রয়েছে। একজন ডিপিএড করছেন। সমাপনী পরীক্ষায় এই বিদ্যালয়টির পাশের শতভাগ। বিদ্যালয়টিতে শিক্ষকের অভাব রয়েছে। রণশিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মত শালগড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সহ উপজেলার অনেক স্কুলে শিক্ষার্থীর তুলনায় শিক্ষক কম রয়েছে। কিন্তু চন্দ্রা স্কুলে উল্টো পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

সূত্র জানায়, চন্দ্রা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন সহকারী শিক্ষক ডেপুটেশনে অন্যত্র কাজ করছেন। তবে এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক কোন মন্তব্য করেনি। উপজেলা শিক্ষা অফিসার নজরুল ইসলাম বলেন, সব বিষয় তো মনে নেই। কাগজ পত্র দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।