শুক্রবার, ৫ই অক্টোবর, ২০১৮ ইং ২০শে আশ্বিন, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

‘পরিবারে খবর দে, একলাখ টাকা লাগবে’

তোরা মাদক ব্যবসায়ী। যুবকরা প্রতিবাদ জানায়। পুলিশ তাদেরকে তল্লাশি করতে বলে। তল্লাশি করে কিছু না পেয়ে ওই থানার এক এসআই ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, তোরা ফেনসিডিল পান করেছিস। তোদের পরিবারে খবর দে, একলাখ টাকা ছাড়া তোদেরকে ছাড়া হবে না। তখন ওই দুই যুবক জানায়, স্যার আমরা ধর্মগ্রন্থ ছুঁয়ে বলতে পারি, ফেনসিডিল পান করিনি। জামতলায় মেয়ে দেখতে গিয়েছিলাম। আমাদের ক্লিনিকে নিয়ে পরীক্ষা করেন। এভাবেই প্রতিনিয়ত যশোরের শার্শা ও বেনাপোল পোর্ট থানার চিহিৃত কিছু এসআই ও এএসআই’র বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে।

থানার কর্তা এসব জেনেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় তারা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। বেড়াতে আসা, রাতে বাড়ি ফেরার পথে বিভিন্ন ব্যক্তিদের আটকিয়ে তল্লাশির নামে পকেটে ইয়াবা, গাঁজা ঢুকিয়ে দিয়ে নিরীহ মানুষকে মাদক ব্যবসায়ী বানিয়ে হাজার হাজার টাকা আদায় করছে। অনেক ক্ষেত্রে টাকা আদায়ের জন্য মাদক মামলার ভয় দেখানো হয়ে থাকে।

অভিযোগে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার যশোর সদর উপজেলার চাঁচড়া গ্রামের মামুন ও জাকির কনে দেখার জন্যে শার্শা উপজেলার জামতলা গ্রামে আসে। ফেরার পথে দুপুরে যশোরের শার্শা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) দিবাকরের সোর্স ও দু‘জন পুলিশ সদস্য ওই দুজন যুবককে মোটরসাইকেলসহ থানায় ধরে নিয়ে আসে।

এরপর ওই দুই যুবককে বলেন, তোরা মাদক ব্যবসায়ী। যুবকরা প্রতিবাদ জানায়। তারা তাদেরকে তল্লাশি করতে বলে। তল্লাশি করে কিছু না পেয়ে ওই এসআই ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, তোরা ফেনসিডিল পান করেছিস। তোদের পরিবারে খবর দে, একলাখ টাকা ছাড়া তোদেরকে ছাড়া হবে না। তখন ওই দুই যুবক জানায়, আমরা ধর্মগ্রন্থ ছুঁয়ে বলতে পারি, ফেনসিডিল পান করিনি। জামতলায় মেয়ে দেখতে গিয়েছিলাম। আমাদের ক্লিনিকে নিয়ে পরীক্ষা করেন। ওই দুই যুবক যেখানে কনে দেখতে গিয়েছিল, সেখানকার মোবাইল ফোন নাম্বারও দেয়।

এসআই মোবাইলে যোগাযোগ করলে কনের পরিবার থেকে জানানো হয়, দুই যুবকের আসার ঘটনাটি সঠিক। কিন্তু এসআই দিবাকর কোনো কিছুই শোনেননি। তার এক কথা, বাড়ির লোকদের টাকা নিয়ে আসতে বল, না হলে দুই কেজি গাঁজা দিয়ে তোদেরকে চালান করে দেবো। কয়েক ঘণ্টা দেনদরবারের পর ৫ হাজার টাকার বিনিময়ে ওই দুই যুবক মুক্তি পায়।

ক্ষতিগ্রস্ত মামুন বলেন, আমি জীবনে কোনোদিন ফেনসিডিল পান করিনি। আমার পারিবারিক ঐতিহ্য রয়েছে। কিন্তু দারোগা দিবাকর কোনো কথাই শোনেননি। তিনি আমাদেরকে মাদক মামলায় চালান দেয়ার ভয় দেখিয়ে টাকা নেয়ার পাশাপাশি লাঞ্ছিত করেছেন।

স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, শুধু এসআই দিবাকর একা নয়, অন্য এসআই ও এএসআইরা প্রতিদিন যশোর থেকে শার্শা এলাকায় যাওয়া মোটরসাইকেল আরোহীদের ধরে নিয়ে আসে। তাদেরকে ফেনসিডিল পানের ভয় দেখিয়ে উৎকোচ আদায় করে।

এ ব্যাপারে ওই এসআই দিবাকরের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, সন্দেহভাজন দুই যুবককে থানায় ডেকে আনা হয়েছিলো। জিজ্ঞাসাবাদ করে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

এদিকে বেনাপোল পোর্ট থানার এসআই মিজানের বিরুদ্ধে এলাকার সাধারণ মানুষের পকেটে মাদক দিয়ে ব্ল্যাকমেইলিং ও মাদক সেবনকারী এবং মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করে মোটা অংকের অর্থের বিনিময় ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।

অভিযোগে জানা যায়, গত ২০ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৮টার সময় মো. চঞ্চল ও মজনুর পকেটে মাদক দিয়ে চাহিদামত ৪৯ হাজার টাকা নিয়ে ছেড়ে দেন এসআই মিজান। গত ১১ সেপ্টেম্বর হাফিজুর নামের একজনকে পথে দাঁড় করিয়ে জানান, তার কাছে গাঁজা আছে। সে অস্বীকার করলে দেহ তল্লাশি করার সময় কৌশলে পকেটে গাঁজা দিয়ে বলে তোর পকেটে এই গাঁজা পাওয়া গেছে। সাথে সাথে হাতে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে দেয়। পরে চার হাজার টাকা নিয়ে ছেড়ে দেয়। এছাড়া একশ‘ ইয়াবাসহ জহির নামের এক মাদক ব্যবসায়ীকে পোড়াবাড়ি নারায়নপুর মাঠপাড়া গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করে ৭০ হাজার টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেয়। এছাড়াও বিভিন্ন মাদক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে নিয়মিত মোটা অংকের টাকা মাসোয়ারা আদায় করার অভিযোগ রয়েছে এসআই মিজানের বিরুদ্ধে।

এ বিষয়ে বেনাপোল পোর্ট থানার এসআই মিজানের সাথে কথা বললে তিনি এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, একটি মহল আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছেন। আমি এসবের সাথে জড়িত নই।