মঙ্গলবার, ৪ঠা জুলাই, ২০১৭ ইং ২০শে আষাঢ়, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশীদের ঘিরে চিকিৎসা ব্যবসা কলকাতায়

AmaderBrahmanbaria.COM
আগস্ট ২, ২০১৪

---

kolkata-hospitala_129436

প্রায় দুই দশক ধরে কলকাতায় একের পর এক বেসরকারি হাসপাতাল তৈরি হয়েছে অত্যাধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে। এর ফলে দক্ষিণ ভারতে চিকিৎসা করাতে যেতেন পূর্ব-উত্তরপূর্ব ভারতে যেসব মানুষ, তাদের অনেকেরই এখন হাতের নাগালে উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা।

বাংলাদেশ থেকেও হাজার হাজার মানুষ কলকাতার হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসা করাতে যান প্রতিবছর। কিন্তু সার্বিক পরিকল্পনা আর পরিকাঠামোর অভাবে, কলকাতা এখনও পরিপূর্ণ চিকিৎসা কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারেনি। বাংলাদেশী রোগীদের নিয়ে সেখানে চলে হাসপাতালগুলোর মধ্যে ব্যবসা বৃদ্ধির প্রতিযোগিতা, সঙ্গে রয়েছে দালালদের ফাঁদ।

দক্ষিণ-পূর্ব কলকাতার ইস্টার্ন বাইপাসের ধারের মুকুন্দপুর এলাকাটা একসময়ে ছিল জলা জমি। কিন্তু এখন প্রায় চব্বিশ ঘণ্টাই ব্যস্ত। গত দেড়-দুই দশকে সেখানে গড়ে উঠেছে একের পর এক বড় বেসরকারি হাসপাতাল।

বিশিষ্ট ক্যান্সার-সার্জেন গৌতম মুখোপাধ্যায় এই অঞ্চলের বেসরকারি চিকিৎসা পরিষেবার সঙ্গে একেবারে গোড়া থেকেই যুক্ত। তিনি বলছিলেন, সরকারি হাসপাতালগুলির যা অবস্থা হয়েছিল, যে বিপুল সংখ্যক রোগী সেখানে যেতেন, তা হাসপাতালগুলির পক্ষে সামলানো অসম্ভব হয়ে উঠেছিল।

“সেই সুযোগটা নেয় কর্পোরেট সংস্থাগুলো। বছর কুড়ি ধরে তারা কলকাতায় আসতে শুরু করে। বাইপাসের ধারেই তো ১৫-২০টা হাসপাতাল হয়ে গেছে।”

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ইন্টারন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ কার্ডিয়াক সায়েন্সেস হাসপাতালটি সাধারণ মানুষের কাছে ভারতের প্রখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. দেবী শেট্টির হাসপাতাল নামেই পরিচিত।

ওই গোষ্ঠীর পূর্বাঞ্চলের পরিচালক দীপক ভেনুগোপালন বলছিলেন, দীর্ঘদিন ধরে পূর্ব ভারত বা বাংলাদেশের মানুষের কাছে দক্ষিণ ভারতই চিকিৎসার জন্য সেরা জায়গা হয়ে থেকেছে। কিন্তু মানুষের সেই মনোভাব এখন বদলাচ্ছে ।

মি. ভেনুগোপালনের বলেন, গত ৫ বছরে মানুষ আসলে কলকাতার চিকিৎসা-ব্যবস্থার ওপরে ভরসা করতে শুরু করেছেন, কারণ এখানে একের পর এক বিশ্বাসযোগ্য হাসপাতাল তৈরি হয়েছে, তবে এখনও বেসরকারি হাসপাতালগুলো পুরো ভর্তি হয় না।

তিনি আরো বলেন, “বাইপাস অঞ্চল আর মধ্য কলকাতা মিলিয়ে প্রায় হাজার তিনেক শয্যা রয়েছে বেসরকারি খাতে যার ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ শয্যায় রোগী ভর্তি হন, আর বাকিটা খালিই পড়ে থাকে,অর্থাৎ বাজার বৃদ্ধির অনেক সুযোগ রয়েছে।

দক্ষিণপূর্ব কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে স্থানীয় মানুষ ছাড়া আর সবথেকে বেশি যারা চিকিৎসা করাতে আসেন, তারা বাংলাদেশের রোগী।

এই অঞ্চলের সব থেকে পুরণো বেসরকারি হাসপাতাল হলো পিয়ারলেস। ওই হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দিলীপ সমাদ্দার বলছিলেন, তার হাসপাতালে গত বছর প্রায় ১৪ হাজার বাংলাদেশী চিকিৎসা করিয়েছেন।

তার কাছে জানতে চেয়েছিলাম কেন বাংলাদেশের মানুষ কলকাতায় চিকিৎসা করাতে আসেন এত বেশি সংখ্যায়?

মি. সমাদ্দার বলছিলেন, কলকাতায় এখন অনেক মানুষ চিকিৎসা করাতে আসছেন ঠিকই। কিন্তু দক্ষিণ ভারতে যাওয়ার যে ধারা তৈরি হয়ে গিয়েছিল, সেটা বদলাতে সময় লাগছে।

তাহলে, বাংলাদেশ থেকে রোগী কী ধরনের চিকিৎসার জন্য কলকাতা আসেন?

স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ পার্থ প্রতিম বিষ্ণু বলছিলেন, শিশু আর পূর্ণবয়স্কদের ব্রেন টিউমার, মেরুদণ্ডের সমস্যা বা চলাফেরার সমস্যা নিয়েই তার বিভাগে বাংলাদেশ থেকে মানুষ চিকিৎসা করাতে আসেন।

কিডনি বিশেষজ্ঞ দীপক শঙ্কর রায় বলছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হাসপাতালে তাদের বিভাগে বাংলাদেশ থেকে আসা বেশিরভাগ রোগীই কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য আসেন।

একটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাহায্যে দেখা হয়েছিল বাংলাদেশের থেকে আসা দুজন রোগীর সঙ্গে। তাদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম কেন চিকিৎসার জন্য কলকাতাকে বাছলেন তারা ।

একজন বললেন, কলকাতা ঢাকার খুব কাছে আর ভাষা বা খাবারের সমস্যা এখানে হয় না।

আরেক মহিলা রোগী বলছিলেন, ঢাকাতেও চিকিৎসা খারাপ হয় না, কিন্তু কলকাতা থেকে চেনাশোনা অনেকে চিকিৎসা করিয়ে ভাল হয়ে ফিরেছেন -সেই ভরসাতেই এখানে আসা।

বাংলাদেশ থেকে আসা রোগীদের ভারতীয় ভিসা পাওয়াটা একটা বড় সমস্যা, বলছিলেন পিয়ারলেস হাসাপাতালের দিলীপ সমাদ্দার। তিনি বলেন, সরকারের তরফে সার্বিক পরিকল্পনার অভাবে আরও বেশি মানুষ সংখ্যক মানুষ চিকিৎসা পরিষেবা নিতে আসতে পারছেন না।

পিয়ারলেস হাসপাতালের বিপণন বিভাগের প্রধান সুগত মজুমদার বলেন, যারা আসছেন, তাদের অনেক সময়েই দালালের পাল্লায় পড়ে ঠকতে হচ্ছে, বিশেষত বাংলাদেশী রোগীদের।

বাংলাদেশের রোগীদের কলকাতার বিভিন্ন হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়া আর সেদেশের রোগীদের পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করেন জিন পরীক্ষা কেন্দ্র অ্যামপ্লিকনের কর্ণধার ড. সুরঞ্জনা চৌধুরী।

যদিও বেসরকারি বা কর্পোরেট হাসপাতালগুলিকে ঘিরেই কলকাতার চিকিৎসা পরিষেবা চলছে, তবে সবথেকে বেশি মানুষ এখনও চিকিৎসা করান সরকারি হাসপাতালগুলিতেই।

আর বাংলাদেশের নিম্নআয়ের বহু মানুষ সেখানেও আসেন। তাই রুবি জেনারেল হাসপাতালের ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ গৌতম মুখোপাধ্যায়ের কথায়, নজর দেওয়া দরকার সরকারি হাসপাতালের মানোন্নয়নের দিকেও। বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা করাতে যে অর্থের প্রয়োজন, তা গ্রামের মানুষদের অনেকেরই নেই।

কলকাতা হয়ে উঠতে পারবে সত্যিকারের চিকিৎসা পরিষেবা কেন্দ্র- যাতে স্থানীয় মানুষ তো বটেই , উত্তরপূর্ব ভারত বা বাংলাদেশ, নেপাল,ভুটানের মতো প্রতিবেশী দেশগুলোর মানুষও উপকৃত হবেন। এমনই ধরাণা কলকাতার চিকিৎসা পরিষেবার সঙ্গে জড়িতদের।  বিবিসি।

এ জাতীয় আরও খবর