g মেঘনা গিলে খাচ্ছে ২ ডজন গ্রাম : সিদ্ধিরগঞ্জ-কুমিল্লা ৩৩-কেভি জাতীয় সঞ্চালন লাইন হুমকির মুখে !! | AmaderBrahmanbaria.Com – আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া

রবিবার, ৩০শে জুলাই, ২০১৭ ইং ১৫ই শ্রাবণ, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

মেঘনা গিলে খাচ্ছে ২ ডজন গ্রাম : সিদ্ধিরগঞ্জ-কুমিল্লা ৩৩-কেভি জাতীয় সঞ্চালন লাইন হুমকির মুখে !!

AmaderBrahmanbaria.COM
ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৭

---

ফয়সল আহমেদ খান ,বাঞ্ছারামপুর-আড়াইহাজার সরেজমিনে ঘুরে এসে : বাঞ্ছারামপুর-গোপালদী (আড়াইহ্জাার উপজেলা) বাঞ্ছারামপুর কড়–ইতলা অংশে রয়েছে জাতীয় বিদ্যুৎ সঞ্চালন গুরুত্বপূর্ণ গ্রীড স্থাপনা।এটি বর্তমানে চরম হুমকির মুখে রয়েছে।বিগত বছর বিদ্যুত বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সাংবাদিকদের সংবাদ ও এলাকাবাসীর দাবী মুখে নৈতিকভাবে জাতীয় গ্রীডটি লাল সিগন্যাল দিয়ে ৯ নম্বর সতর্কতা অবলম্বন করে এই গ্রীডের ক্ষেত্রে।বলা হয়েছিল ,বর্ষার পানি বেড়ে যাওয়ায় কাজ করা সম্ভব নয়।এ বছর গ্রীষ্ম ছাড়িয়ে আবারো বর্ষার আগমন ঘটেছে।কিন্তু কোন সংস্কার কার্য্যক্রম হাতে না নেয়ায় জাতীয় বিদুৎ প্রবাহে এই সঞ্চালন লাইনটি যে কোন সময় জাতীয় বিপর্য্যয় ঘটিয়ে ফেলতে পারে।এরই মধ্যে জাতীয় গ্রীডটি দেখাশোনা করার জন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নির্মিত সরকারি বিল্ডিংভবনটি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায়,কর্মকর্তারা-ও যাযাবরের মতো মাঝেমধ্যে দেখতে আসেন গ্রীডটি কবে ভেঙ্গে পড়বে (!!)।

খোজ নিয়ে জানা গেছে,ভাঙ্গন প্রতিরোধের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও এলাকার সাংসদ এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন¿ী তাজুল ইসলাম নদী ভাঙ্গনপ্রবণ এলাকা এবং ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্র¯ত নদীর পাড়গুলোতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহায়তায় টেকসই এবং দীর্ঘস্থায়ী প্রযুক্তি ব্যবহার করে নদীভাঙ্গনের কবল থেকে তীরবর্তী এলাকাসমূহ রক্ষার জন্য প্রকল্পটির খোঁজ খবর রাখছেন বলে জানা গেছে।কিন্তু আগুন আর পানির কবল থেকে শতভাগ রক্ষার পাওয়ার মতো কোন প্রযুক্তি বিশ্বে এখনো সৃষ্টি হয় নি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সমীক্ষায় দেখা গেছে বাৎসরিক নদী গর্ভে বিলীন হওয়া উক্ত জমির মূল্য প্রায় ৪লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ও প্রতি বছর নদীর করাল গ্রাসে ১০০ মিটারের অধিক জায়গা নদীতে তলিয়ে যায়।

নারায়নগঞ্জের সাইফুল ইসলাম বাদল এ প্রসঙ্গে জানান,-‘‘মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন¿ী ক্যা.তাজুল ইসলাম নিজ আগ্রহের কারনেই ভাঙ্গনের কবল থেকে শত-শত মানুষকে রক্ষায় আড়াইহাজার এলাকাসহ নবীনগর,সলিমগঞ্জ ও বাঞ্ছারামপুরস্থ মরিচাকান্দি নদীভাঙ্গন কারনে বিশেষ ক্ষতিগ্রস্থ ভাঙ্গন এলাকা রক্ষায় যা-যা করার সরকারের তরফ থেকে সবকিছুই করা হবে।তাই বলে,ম্যাজিকের মতো তো সামান্য সময়ে এতোবড় নদীভাঙ্গন রক্ষাবাঁধ প্রকল্পটি শেষ করা সম্ভব নয়।’’

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাওবি) সচীব মো.ওয়াহিদুজ্জামান এই প্রতিনিধিকে বলেন,-‘পাওবি আগামী বছরের মধ্যে এসব গ্রাম প্রকল্পের অধীন চলে আসবে এবং ভাঙ্গনপ্রবণ এলাকাবাসী শতভাগ না হলেও অনেক উপকৃত হবেন’’। পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে ঝুকি বাড়ছে জাতীয় ৩৩ হাজার ভোল্টের এই বিদ্যুত গ্রীডটি।

উত্তাল এখন মেঘনা।দৈনিক পানি বেড়েই চলেছে।পাল্লা দিয়ে ঝুকি বাড়ছে জাতীয় ৩৩ হাজার ভোল্টের এই বিদ্যুত কেন্দ্রটি।
ঝড়ো বাতাস আর সব গিলে খাওয়া ঢেউয়ের সামনে দাঁড়িয়ে বাঞ্ছারামপুরের খাসনগর গ্রামের বৃদ্ধ করিম মিয়া(৫৫)কাঁদছিলেন।পূর্ব-পুরুষের স্মৃতিবিজড়িত ভিটেমাটি খোঁজার মিথ্যা চেষ্টা করছেন মেঘনার বুকে,-যা গত ৪/৫দিনে মেঘনার গর্ভে চলে গিয়েছে।গত বছর গেছে তার শেষ আবাদী জমিটুকুন। শুধু আছাদ,করিম মিয়া নন, মেঘনার বুকে কম-বেশী বিলীন হয়ে গেছে না.গন্জ জেলাস্থ আড়াইহাজারের ৮টি গ্রাম,বাঞ্ছারামপুরের ১২টি ও নবীনগরের ৪টি গ্রাম।

মেঘনা নদীর ভাঙ্গণরোধে মেঘনার তীরবর্তী বিভিন্ন গ্রামবাসী বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর তীর্থের কাঁকের মতো তাকিয়ে ছিলেন এদত অঞ্চলের প্রভাবশালী আ.লীগ নেতা,সংসদ সদস্য ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ক্যা.তাজুল ইসলামরে দিকে।তিনি তা হয়তো বুঝতে পেরেই গত বছর পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে আড়াইহাজার-বাঞ্ছারামপুর-নবীনগর উপজেলা রক্ষা প্রকল্প উদ্ধোধন করেন। ঐ সময় তিনি বলেছিলেন, এ প্রকল্প বা¯তবায়ন হলে এ এলাকার মানুষ মেঘনার নদীর গ্রাসের কবল থেকে রক্ষা পাবে তীরবর্তী গ্রামের মানুষেরা। এছাড়া এলাকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এ বাঁধ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।কিন্তু এক বছর চলে গেলেও গুরুত্বপূর্ণ এ বাঁধটি নির্মান সম্পূর্ণ করতে না পারায় চলতি বর্ষা মৌসুমে পুনরায় শুরু হয়েছে ভাঙ্গন।ইতোমধ্যে অনেকের ঘর-বাড়ি,আবাদি জমি ধীরে-ধীরে নদী গর্ভে চলে গেছে।

“পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৪০কোটি টাকার ভাঙ্গনরোধ প্রকল্প শেষ হবে কবে?”-জিজ্ঞাসা ৩ উপজেলার ১০লাখ মানুষের”

এখনো প্রতিদিন ভাঙ্গছেই।উল্লেখ্য,বাঞ্ছারামপুর উপজেলার জয়নগর, মরিচাকান্দি, কানাইনগর,শাšিতপুর,ডোমরাকান্দি,বাহেরচর-খাস্নগর,উলুকান্দি প্রভৃতি গ্রামগুলো প্রায় ১৯৬৮ সাল থেকে মেঘনার ভাঙ্গনের কবলে পড়ে ইতোমধ্যে হাজার হাজার মিটার জায়গা-জমিন নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। বিলীন হতে চলেছে আরো সহস্রাধকি বাড়ি এবং আবাদী জমি।

মেঘনার কোলে বসবাসকারী বিভিন্ন বসতভিটার বাসিন্দারা জানান,এ বছর বর্ষার শুরুতেই প্রতিদিন গড়ে প্রায় দেড় ফিট করে ভূমি গ্রাস করছে মেঘনার উত্তাল পানি।
সরেজমিনে আড়াইহাজার উপজেলা :
প্রতিবছর বর্ষাকালে মেঘনার বুকে বেশ কিছু গ্রাম বিলীন হয়ে গেলেও স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে নদীভাঙন ঠেকাতে এখানে ব্যবস্থা নেয়নি কোন সরকারই। ফলে হাজার হাজার গ্রামবাসী মেঘনার ভাঙনের কাছে নিজেদের নিয়তিকে যেন স্বেচ্ছায় স্বীকার করে নিয়েছেন। নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার বিশনন্দী, কালাপাহাড়িয়া ও খাগকান্দা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে ব্যাপক নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনের ভয়ে মেঘনার তীরবর্তী মানুষের মধ্যে আতংক দেখা দিয়েছে। কখন মেঘনার উত্তাল ঢেউ ভেঙে নিয়ে যাবে তাদের আবাসস্থল এই আতংকে দিন কাটাচ্ছেন তারা। নদীভাঙন রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা না নিলে ঘরছাড়া হয়ে পড়বে হাজারো মানুষ। বিশনন্দী ইউনিয়নের দয়াকান্দা দক্ষিণপাড়া, খাগকান্দা ইউনিয়নের খাগকান্দা নয়াপাড়া, কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়নের কালাপাহাড়িয়া, মধ্যারচর, কদমীরচর, ইজারকান্দি, বিবিরকান্দি, পূর্বকান্দি, বদলপুর গ্রামের মানুষের মধ্যে চলছে এক ভীতিকর পরিবেশ।

মানুষের মনে নেই কোন শান্তি। এর মধ্যে বিশনন্দী ইউনিয়নের দয়াকান্দা দক্ষিণপাড়া, খাগকান্দা ইউনিয়নের খাগকান্দা নয়াপাড়া, কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়নের কালাপাহাড়িয়া, কদমীরচর, বদলপুর, মধ্যারচর, বিবিরকান্দি, পূর্বকান্দি গ্রামের মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্ষা শুরু হলেই আরম্ভ হয় নদীভাঙন। ইতিমধ্যেই কয়েকটি গ্রাম ভাঙতে ভাঙতে মেঘনাবক্ষে প্রায় বিলীন হয়ে গেছে। দয়াকান্দা বাজারটি সম্পূর্ণই মেঘনাগর্ভে চলে গেছে। ফলে বাজারটি অনেকদূর পর্যন্ত সরে এসেছে।

কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়নের কদমীরচর, বিবিরকান্দি, পূর্বকান্দি গ্রাম এবং বদলপুর গ্রামের জনসাধারণ জানায়, আমরা নদীর তীরে বসবাস করার কারণে বর্ষা এলেই শুরু হয় আমাদের যন্ত্রণা। গ্রামবাসী আরও জানায়, প্রমত্ত মেঘনা প্রতিবছর বাড়ি ও জমি গ্রাস করার ফলে এখন অনেক বাড়িঘরের চিহ্ন পর্যন্ত নেই। সবই মেঘনাবক্ষে বিলীন হয়ে গেছে। বাধ্য হয়ে তারা পরিবার-পরিজন ও গরু-বাছুর, হাঁস-মুরগীসহ যাবতীয় জিনিসপত্র নিয়ে পুরনো বসতিস্থল থেকে অনেক দূরে ক্ষেতের মধ্যে বাড়িঘর তৈরি করে সেখানে বসবাস করছেন। কিন্তু সর্বনাশা মেঘনার ভাঙন সেখানেও ধেয়ে আসছে। বর্তমানে যেখানে তারা বাড়িঘর তৈরি করেছেন সে জায়গাটুকু ভেঙে গেলে তাদের আর বসবাসের জায়গা থাকবে না। তাদের মেঘনার ভাঙনের কবল থেকে রক্ষা করার জন্য সরকারি কোন উদ্যোগের কথা তারা কেউ জানেন না। তাই ভাঙনকবলিত কয়েকটি গ্রামের মানুষ মেঘনার ভাঙনের কবল থেকে রক্ষা করতে নিজেদের উদ্যোগে বাঁশ, খুঁটি ও মুলির বেড়া দিয়ে যে যেমনভাবে পারছেন নদীর ভাঙন ঠেকাতে চেষ্টা করছেন। কিন্তু তা দিয়ে কি রাক্ষুসী মেঘনার কড়াল গ্রাস থেকে গ্রামকে রক্ষা করা সম্ভব।

আড়ই হাজার উপজেলার ক্ষমতাসীন দলের এমপি মো.নজরুল ইসলাম বাবু জানান, নদীভাঙন রোধে বর্তমান সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে। আশাকরি অচিরেই এই সমস্যার সমাধান হবে। আড়াইহাজার উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ ছরোয়ার হোসেন জানান, বিষয়টি নিয়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা চলছে।

 

এ জাতীয় আরও খবর