রবিবার, ২৫শে মার্চ, ২০১৮ ইং ১১ই চৈত্র, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

বর্ণিল শোভাযাত্রায় উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি উদযাপন

আনন্দ-উচ্ছ্বাস, বর্ণিল শোভাযাত্রায় উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার স্বীকৃতি উদযাপন করেছেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সরকারের ৫৭টি মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অধীনস্ত দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বৃহস্পতিবার রাজধানীর প্রধান সড়কগুলোতে শোভাযাত্রা করে সমবেত হন বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে।

‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ থেকে অগ্রগতির নতুন সোপানে উন্নীত হওয়ার আনন্দে পথে পথে শোভাযাত্রায় পুরো রাজধানী রূপ নেয় উৎসবের নগরীতে। তবে এতে নগরবাসীকে কিছুটা দুর্ভোগও পোহাতে হয়েছে। শোভাযাত্রার কারণে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের আশপাশের ৯টি সড়কে যান চলাচল নিয়ন্ত্রিত থাকায় নগরীর কোথাও ছিল দীর্ঘ যানজট, আবার কোথাও ফাঁকা সড়কে ছিল যান সংকট।

বেলা সাড়ে ৩টায় বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের দুয়ার খুললেও, বেলা সাড়ে ১২টা থেকেই নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে জমায়েত হন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী। ছুটির আমেজ ছিল সরকারি কার্যালয়ে। দুপুর ১২টার আগেই ‘অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ লেখা টি-শার্ট, টুপি পরে জাতীয় পতাকা ও ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে শোভাযাত্রার প্রস্তুতি শুরু করেন তারা।

বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব, সচিব, অতিরিক্ত সচিবের মতো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও শোভাযাত্রায় যোগ দেন। তাদের নেতৃত্বে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নয়টি নির্ধারিত স্থান থেকে বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে, নেচে-গেয়ে, হাতি-ঘোড়া নিয়ে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের পথে শোভাযাত্রায় শামিল হন। কোনো কোনো শোভাযাত্রা থেকে দেশাত্মবোধক ও মুক্তিযুদ্ধের অনুপ্রেরণামূলক গান বাজানো হয়। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও যোগ দেন তাদের সঙ্গে।

শোভাযাত্রায় যোগ দিয়ে রেলওয়ের মহাপরিচালক আমজাদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, স্বাধীনতার পর বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলত পশ্চিমা দাতারা। বাংলাদেশ ৪৭ বছরে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হয়েছে। এ অর্জন সরকারের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী ও জনগণের।

মাথাপিছু আয়, মানব উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচকের ভিত্তিতে তিন বছর পরপর স্বল্পোন্নত দেশগুলোর উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উত্তরণের আবেদন পর্যালোচনা করে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি)। মাথাপিছু আয় কমপক্ষে এক হাজার ২৩০ ডলার, মানব উন্নয়ন সূচকে স্কোর ৬৫-এর বেশি এবং অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতার স্কোর ৩১-এর কম হলে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি দেয় সিডিপি।

বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় এক হাজার ২৭১ ডলার, মানব উন্নয়ন সূচকে স্কোর ৭২ দশমিক ৯ এবং অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতার সূচকে স্কোর ২৪ দশমিক ৮। স্বল্পোন্নত দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্তির ৪৩ বছর পর উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের শর্ত পূরণে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ, তবে এখনই উন্নয়নশীল দেশের কাতারে আসতে পারছে না। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অনুমোদন সাপেক্ষে ২০২৪ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পাবে বাংলাদেশ।

বৃহস্পতিবারের বর্ণিল শোভাযাত্রার ফেস্টুনে ছিল সরকারের উন্নয়নের নানান স্লোগান— ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্জন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ’, ‘হাতে রেখে হাত, উন্নয়নের ডাক’, ‘বাংলাদেশ আজ দুর্বার, রুখবে তাকে সাধ্য কার’ ইত্যাদি। আনন্দ শোভাযাত্রায় অংশ নিয়ে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব চন্দন কুমার দে বলেন, সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও বাংলাদেশ উন্নয়নের অংশীজন; তাদেরও অবদান রয়েছে। কাজের স্বীকৃতি পেয়েছেন তারা। তাই তারা আজ আনন্দিত, উল্লসিত।

শোভাযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে জমায়েত স্থান থেকে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম পর্যন্ত পথে ছিল কঠোর নিরাপত্তা। শোভাযাত্রার সামনে-পেছনে ছিল র‌্যাব-পুলিশের পাহারা। শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীদের আর্চওয়ের মধ্য দিয়ে তল্লাশি করে একজন একজন করে স্টেডিয়ামে প্রবেশ করানো হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতা জানিয়েছেন, উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে আনন্দ সমাবেশ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘স্মৃতি চিরন্তন’ প্রাঙ্গণে ফেস্টুন ও বেলুন উড়িয়ে সমাবেশের উদ্বোধন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান।

সঙ্গীত বিভাগের উদ্যোগে দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করা হয়। সমাবেশে ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল ও কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ‘উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ, শেখ হাসিনা সরকারের অর্জন’ স্লোগান সংবলিত ব্যানারসহ সারিবদ্ধভাবে অবস্থান করেন। সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার সরকারকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানানো হয়।

যানজট, যান সংকট: শোভাযাত্রার কারণে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সড়কে কয়েক ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়তে হয় ওই পথের যাত্রীদের। শাহবাগ থেকে মৎস্য ভবনমুখী সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয় দুপুর ১টার দিকে। দোয়েল চত্বর থেকে সচিবালয়মুখী রাস্তাও ছিল বন্ধ। এ কারণে ধানমণ্ডি, মোহাম্মদপুর, হাজারীবাগ থেকে পল্টন, গুলিস্তান, মতিঝিলমুখী যাত্রীদের কাকরাইল হয়ে ঘুরে যেতে হয়। এর প্রভাবে বিজয় সরণি, ফকিরাপুল, কাকরাইলে ছিল তীব্র যানজট। মিরপুর, কল্যাণপুর, ফার্মগেট থেকে পল্টন, গুলিস্তান, মতিঝিলমুখী যাত্রীরাও একই দুর্ভোগে পড়েন। বিশেষ করে পুরান ঢাকার সঙ্গে যান চলাচল ছিল একেবারেই স্থবির।

শোভাযাত্রার কারণে বৃহস্পতিবার নগরীতে যান চলাচলও ছিল কম। গণপরিবহনের বাস শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে ব্যবহৃত হওয়ার কারণে বাস সংকট ছিল। বিকেলে ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার এলাকায় দেখা যায় বহু যাত্রী বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছেন রাস্তায়।

Print Friendly, PDF & Email