বৃহস্পতিবার, ২১শে জুন, ২০১৮ ইং ৭ই আষাঢ়, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

কুইনিন জ্বর সারাবে বটে, কিন্তু কুইনিন সারাবে কে?

সাম্প্রতিক মাদকবিরোধী অভিযান ও কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধ’ নিয়ে মানবাধিকারকর্মীরা যতই সোচ্চার হোন না কেন, অস্বীকার করার উপায় নেই যে এর প্রতি জনসাধারণের একটা প্রচ্ছন্ন সমর্থন ছিল। দেশে যখন খুন-ধর্ষণ, মাদক পাচার ও সেবনের মতো ঘটনা বৃদ্ধি পায়, তখন অতিষ্ঠ নাগরিকেরা আলাপ-আলোচনায় বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মতপ্রকাশ করে থাকেন যে এই অপরাধীদের গুলি করে হত্যা করা উচিত। সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যখন সে রকমই কোনো উদ্যোগ নেয়, তখন তা স্বাভাবিক কারণেই জনসমর্থন পায়। অর্থাৎ ক্রমবর্ধমান অরাজক অবস্থার বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সক্রিয় দেখতে চান তাঁরা। কিন্তু অপরাধ ও শাস্তির বিষয়টিকে যে এতটা সরলীকরণ করা যায় না, সেটা বুঝতে সময় লেগে যায়। তখনই হয়তো প্রশ্ন ওঠে, কুইনিন জ্বর সারাবে বটে, কিন্তু কুইনিন সারাবে কে?

সাম্প্রতিক অভিযানে কথিত বন্দুকযুদ্ধে টেকনাফের পৌর কাউন্সিলর একরামুল হক নিহত হওয়ার পর এখন সেই ‘পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার’ কথাটিই উচ্চারিত হচ্ছে সর্বত্র। একরাম নিহত হওয়ার আগ মুহূর্তের কথোপকথন এবং ওই সময়ের পরিস্থিতির একটি অডিও টেপ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর মাদকবিরোধী অভিযান প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।

মাদকবিরোধী অভিযানে কথিত বন্দুকযুদ্ধে শতাধিক ব্যক্তির প্রাণহানি ঘটেছে। আটকও করা হয়েছে কয়েক শ মানুষকে। এদের মাদক-সম্পৃক্ততা নিয়ে অনেকটাই নিঃসংশয় ছিল সাধারণ মানুষ। বিচারবহির্ভূত হত্যা নিয়ে মানবাধিকারকর্মীদের ক্ষীণ প্রতিবাদ চাপা পড়ে গেছে সাধারণ মানুষের একধরনের আশা ও স্বস্তির মধ্যে। মানুষ মাদকের ভয়াবহতা থেকে সমাজের মুক্তি চেয়েছে। কিন্তু আইনকে পাশ কাটিয়ে শাস্তির প্রক্রিয়াটি শেষ পর্যন্ত কী রকম বিপজ্জনক মোড় নিতে পারে, সেই অভিজ্ঞতা তারা লাভ করল একরামের মৃত্যুর ঘটনা থেকে।

নিহত ব্যক্তিদের শুধু ‘সংখ্যা’ হিসেবে ধরে নিয়ে, ভিড়ের মধ্যে একটি বা দুটি (এমনকি নিরপরাধ হলেও) সংখ্যা বেড়ে গেলে পুরো প্রক্রিয়াটির কোনো তারতম্য ঘটবে না বলে যদি মনে করেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু ‘অসাধু’ সদস্য, তাহলে ব্যাপারটি কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়, সাম্প্রতিক ঘটনা তারই একটি উদাহরণ। ‘অসাধু’ সদস্য কথাটি এখানে নির্দ্বিধায় ব্যবহার করতে পারছি, কারণ মাদক ব্যবসায়ী ও তাদের সহযোগীদের নামের যে তালিকাটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় করেছে, তাতেও এসেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু সদস্যের নাম।

বিশ্বজিৎ চৌধুরী প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক, কবি ও সাহিত্যিক

Print Friendly, PDF & Email

এ জাতীয় আরও খবর

৫ জানুয়ারির কলঙ্ক রেখেই সরকারের চলছে নির্বাচনী প্রস্তুতি : জাগপা

বাংলাদেশ দেখে বিস্মিত ব্রাজিলিয়ান সাংবাদিকরা

হাতির পায়ের তলায় পিষ্ট হয়ে শিশু নিহত, হাতি আটক

পরীক্ষামূলকভাবে সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ আগামী অর্থবছরেই

ফুটবল বিশ্বকাপের আদলে বিয়ের আসর

পঞ্চগড়ে বিষপানে মা-ছেলের মৃত্যু