শুক্রবার, ৫ই অক্টোবর, ২০১৮ ইং ২০শে আশ্বিন, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

তারেক জিয়া কেনো দেশে আসছেন না?

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন জায়গায় মামলা রয়েছে। কিছু মামলায় ‍সাজাও পেয়েছেন তিনি। আর কিছু মামালায় গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে। এসব কিছু মিলিয়ে দেশে আসছেন না বিএনপির এই নেতা। দেশে আসলেই তাকে জেলের ঘানি টানতে হবে।

তারেক জিয়ার বিরুদ্ধে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন যায়গায় শতাধিক মামলা রয়েছে। তার মধ্যে অর্থপাচার ও দুর্নীতির দুটি মামলায় সাজা পেয়েছেন তিনি। এই দুই মামলায় সাজা হওয়া ছাড়াও তার বিরুদ্ধে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় দুটিসহ ঢাকার আদালতগুলোয় এখনও ১৯টি মামলার কার্যক্রম চলমান। এসব মামলার প্রায় প্রত্যেকটিতে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে।

এদিকে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছেন, দুটি মামলায় তারেক রহমানের সাজা হয়েছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাসহ অন্যান্য অভিযোগে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে বর্তমানে আটটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, অর্থপাচারের অভিযোগে ২০০৯ সালের ২৬ অক্টোবর তারেক রহমান ও তার বন্ধু গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে আসামি করে ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট থানায় একটি মামলা দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০১১ সালের ৬ জুলাই এ মামলার বিচার শুরু হয়। বিচারিক কার্যক্রম শেষে ২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩-এর বিচারক তারেক রহমানকে খালাস দিয়ে গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে সাত বছর কারাদণ্ড ও ৪০ কোটি টাকা জরিমানার আদেশ দেন। এরপরে রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের পর উচ্চ আদালত ২০১৬ সালের ২১ জুলাই নিম্ন আদালতের রায় বাতিল করে তারেক রহমানকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেন।

এ বছরের গত ৮ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় কোনও মামলায় তারেক রহমানকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় তারেক রহমানকে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫-এর বিচারক আখতারুজ্জামান ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেন। একই মামলায় ৫ বছরের সাজা পেয়ে তার মা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে রয়েছেন। তারেক রহমান ছাড়া আরও চার আসামিকে এ মামলায় ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন বিচারক। ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা দায়ের করে দুদক। ক্যান্টনমেন্ট ও রমনা থানায় দায়ের করা দুদকের এই দুই মামলা ছাড়া আর কোনও মামলার বিচার কার্যক্রম শেষ হয়নি এখনও।

ঢাকার বিশেষ জজ আদালত ৫-এ বিচারাধীন রয়েছে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলাটি। এ মামলায় মা খালেদা জিয়ার সঙ্গে আসামি রয়েছেন তারেক রহমানও। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে দায়ের হওয়া আরেকটি মামলা ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কামরুল হোসেন মোল্লার আদালতে রয়েছে। গুলশান থানার ৩৪(৩)০৭ নম্বরের দ্রুত বিচার আইনে দায়ের করা মামলাটি ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম সাদবীর ইয়াছির আহসান চৌধুরীর আদালতে বিচারের অপেক্ষায় রয়েছে।

ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম দেবব্রত বিশ্বাসের আদালতে বিচারাধীন রয়েছে ১২৩৩/১৪ নম্বরের মামলাটি। ৯৫৪/১৪, ৮৪১/১৪, ৩৮০/১৫, ৭২০/১৫ এবং ১৯৬/১৫ নম্বর মামলা রয়েছে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক আহসান হাবিবের আদালতে। মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক সুব্রত ঘোষ শুভ-এর আদালতে বিচারাধীন রয়েছে ৩৮০/১৪ নম্বর মানহানির মামলাটি। এছাড়া ঢাকার অন্যান্য আদালতে বিচারাধীন রয়েছে ১৯৬/১৫, ৬১৭/১৫, ৯৪১/১৫ ও ৩৯৩/১৪ নম্বরের মামলা। সব মামলাতেই তারেক রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি রয়েছে। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নসহ অন্যান্য অভিযোগে গুলশান থানার ১০২(৩)৭ ও ১৩(৫)০৭ নম্বর মামলা এবং কাফরুল থানার ৫২(৯)০৭ ও ৬৮(৩)০৭ নম্বর মামলাটি এখনও তদন্তাধীন রয়েছে।

তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলাগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি ও মানহানির অভিযোগে দায়ের করা। এছাড়া ঘুষ গ্রহণ, দুর্নীতি ও অর্থপাচার, আইনশৃঙ্খলা বিঘ্ন, হত্যা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা রয়েছে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে।

প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর তারেক রহমান উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। তখন থেকেই লন্ডনে অবস্থান করছেন তারেক। জানা গেছে, বর্তমানে লন্ডনের সাউথ ওয়েলিংটন হাসপাতাল ও লন্ডন হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলছে। তিনি সেন্ট্রাল লন্ডনের এডমন্টনে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন।