শুক্রবার, ৫ই অক্টোবর, ২০১৮ ইং ২০শে আশ্বিন, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দেশিয় মাছ বিলুপ্তির পথে

তৌহিদুর রহমান নিটল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া : মৎস্য ভাণ্ডার খ্যাত ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নদ-নদী, খাল-বিল, পুকুর ডোবা ও জলাশয় থেকে দেশি প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হতে চলেছে। গত ১৫–২০ বছরের ব্যবধানে অর্ধশতাধিক দেশি প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বর্তমানে জেলাতে দেশি প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হলেও এর স্থান দখল করেছে বিদেশি বিভিন্ন জাতের হাইব্রিড মাছ।

বর্তমানে জেলার  জলাশয়ে ও পুকুরে পাঙ্গাশ, সিলভার কার্প, জাপানি রুই, গ্রাসকার্প, থাইপুঁটি, বিভিন্ন জাতের তেলাপিয়া, মিনারকার্প, থাই কৈ, আফ্রিকান মাগুর সহ বিভিন্ন প্রজাতির বিদেশি মাছ চাষ হচ্ছে। অধিক মুনাফা লাভের আশায় মৎস্য চাষিরা বিদেশি জাতের মাছ চাষের দিকে প্রতিনিয়ত ঝুঁকেছে। এই মাছ চাষ করতে গিয়ে চাষিরা জলাশয়ের পানিতে নানা প্রকারের বিষ দেয়ার কারণে দেশি মাছ মরে গিয়ে বিলুপ্ত হতে চলেছে বলে অভিজ্ঞ মহলের অভিমত।

গত ১০-১২ বছর আগেও জেলার হাট বাজারে কৈ, মাগুর, শিং, বোয়াল, মৈল, পাবদা, চেলা, চিতল, বাতাসী, খৈলশা, টুপি, আইড়, বাঘাইর, রিঠা, বাউস, টাকি, টেংরা, সরপুটি, গোলশা, ভেদা, বেলে সহ   প্রায় অর্ধ- শতাধিক সুস্বাদু মাছ পাওয়া যেত কিন্তু এখন সে মাছগুলি খুব কমই

বলতে বাজারে  দেখা মিলে বললেই চলে।
 সদর উপজেলার পাইকপাড়া গ্রামের রফিক মিয়াসহ বেশ কয়েকজন জেলে  বলেন, আগেকার দিনে প্রতিবছর বর্ষা হতো পানিতে প্রচুর পরিমাণে দেশিয় মাছ আসতো। সে মাছ  অধিকাংশ মানুষই মাছ মেরে নিজে খেতেন আবার বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করত। তখন জাল পেতে নদী থেকে পোনা ধরতো হতো না। যে কারণে বর্ষার পানিতে পোনা ছাড়িয়ে যেতো বিভিন্ন নদী, খাল, বিল ও জলাশয় আষাঢ-শ্রাবণ মাসে প্রচুর পরিমাণ মাছ ধরা পড়তো। এছাড়া আষাঢ় মাসে যখন নতুন বর্ষার পানিতে বড় বড় কাতল, রুই, কালিবাওশ ও  বোয়াল মাছ ধরা পড়তো। তারা আক্ষেপ করে বলেন, সে দিন কোথায় গেল এখন আর নদীতে মাছ দেখা মিলেনা।
 মৎস্য বিশেষজ্ঞদের মতে কৃষি জমিতে রাসায়নিক সারের ব্যবহার ও বিভিন্ন ধরণের কীটনাশক ব্যবহারের ফলে নদী, নালা, খাল, বিল ও জলাশয়ের  পানিতে মিশে পানি বিষাক্ত হচ্ছে আবার বিভিন্ন কারখানার বর্জ্যে পানিতে মিশে পানি বিষাক্ত করছে ফলে দেশি মাছ মরে যাচ্ছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানান  জেলার বিভিন্ন এলাকায় মৎস্য অধিদপ্তরের উদ্যোগে প্রত্যেক বছরের মত এবছরও বিভিন্ন প্রজাতির দেশি মাছের পোনা নদী,খাল-বিলে অবমুক্ত করা হয়েছে। দেশি জাতের মাছ রক্ষার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে এবং অতি দ্রুত এর ফল পাওয়া যাবে।