বুধবার, ১০ই মে, ২০১৭ ইং ২৭শে বৈশাখ, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

গম্ভীর ছাড়া ভারতের সবাই আফ্রিদির বন্ধু

AmaderBrahmanbaria.COM
মে ৫, ২০১৭
news-image

স্পোর্টস ডেস্ক : কী দুর্দান্ত এক উপহার শহীদ আফ্রিদিকে দিয়েছিল ভারতীয় দল! আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়ে দেওয়া পাকিস্তানি অলরাউন্ডারকে কদিন আগে বিরাট কোহলির একটা জার্সি উপহার দিয়েছে, যাতে সই ছিল ভারতের সব ক্রিকেটারের। আর ছিল কোহলির ছোট্ট একটা বার্তা, ‘শহীদ ভাই, আপনার জন্য শুভকামনা। আপনার সঙ্গে খেলতে পারাটা সব সময়ই ছিল আনন্দের।’

ছোট্ট উপহার, কিন্তু তার মাহাত্ম্য অনেক বড়। রাজনীতি, কূটনীতিতে ভারত-পাকিস্তানের সম্পর্কটা জটিল, মাঠের ক্রিকেটেও দুই দলের তীব্র কিন্তু উপভোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা। কিন্তু মাঠের বাইরে? সেখানে ক্রিকেটারেরা বন্ধুর মতন। আফ্রিদিকে দেওয়া উপহারই সেটির জানান দেয়। এবার আফ্রিদি নিজেও বললেন একই কথা। আইসিসির ওয়েবসাইটে লেখা কলামে ৩৭ বছর বয়সী সাবেক অলরাউন্ডার লিখেছেন, ভারতের প্রায় সব ক্রিকেটারের সঙ্গেই তাঁর বন্ধুত্ব আছে। সেটি পুরোনোদের সঙ্গে যেমন, তেমনি বর্তমান দলের ক্রিকেটারদের সঙ্গে। তবে একজন ব্যতিক্রম আছেন—গৌতম গম্ভীর।

জুনে শুরু হতে যাওয়া চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে একই গ্রুপে পড়েছে ভারত ও পাকিস্তান। ৪ জুন এজবাস্টনে মুখোমুখি হবে দুদল। সেই ম্যাচ নিয়ে লিখতে গিয়েই আফ্রিদি টেনে আনলেন দুই দলের খেলোয়াড়দের সুন্দর সম্পর্কের কথা। তুলে এনেছেন গম্ভীরের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন নিয়েও, ‘সাধারণ মানুষের যা ধারণা, ভারত ও পাকিস্তানের খেলোয়াড়দের সম্পর্কটা কিন্তু ঠিক এর উল্টো। বেশ ভালো। অবশ্যই গৌতম গম্ভীরের মতো কিছু ব্যতিক্রম আছে। যার সম্পর্কে আমি বলব ও ঠিক বন্ধুসুলভ নয়। খুব শিগগিরই আমাদের একসঙ্গে কোনো কফিশপে দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা কম।’

এমন কেন? সেটির ব্যাখ্যাও দিয়েছেন আফ্রিদি, ‘কয়েক বছর আগে মাঠে আমাদের একটু লেগে গিয়েছিল (২০০৭ সালে, কানপুরে)। সেটি বিশ্বজুড়ে অনেক খবরের শিরোনামও হয়েছিল। আমি ওসব ভুলে এগিয়ে গেছি, আমার কাছে মনে হয় এগুলো খেলারই অংশ। তবে গৌতম কোনো কারণে সেটি ভোলেনি। ওর জন্য শুভকামনা।’

কিন্তু গম্ভীরের ব্যাপারটা শুধুই তাঁর কাছে একটা ব্যতিক্রম। এ ছাড়া ভারতের অন্য খেলোয়াড়দের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কটা যে বন্ধুর মতোই। তা কার সঙ্গে সম্পর্কটা সবচেয়ে ভালো? হরভজন সিং, যুবরাজ সিং ও জহির খান। আফ্রিদি লিখেছেন, ‘এই তিনজন আমার খুব ভালো বন্ধু। যখন একে অন্যের সঙ্গে খেলতাম, নিয়মিত দুই দলের সফর হতো, তখন একসঙ্গে দুর্দান্ত কিছু সময় কাটানোর স্মৃতি আছে আমাদের। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে আমরা একসঙ্গে অনেক ঘুরতাম, একে অন্যের বাড়িতেও সময় কাটাতাম। এখন অবশ্য সবাই বিবাহিত। স্বাভাবিকভাবেই জীবনের অন্য দায়িত্বগুলো সামনে এসে পড়েছে, অগ্রাধিকারের তালিকায় বদল এসেছে। তবে এখনো যখন দেখা হয়, আমাদের সম্পর্কটা আগের মতোই উষ্ণ ও ভালোবাসাপূর্ণ থাকে। একসঙ্গে কাটানো সময়গুলোর কথা মনে করি।’

হরভজন, যুবরাজ, জহির—তিনজনই তো ঠিক বর্তমান প্রজন্মের নন। এই প্রজন্মের ভারতীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে কার সঙ্গে আফ্রিদির সম্পর্ক ভালো? কোহলি! সাবেক পাকিস্তান অধিনায়ক লিখেছেন, ‘এখনকার ক্রিকেটারদের মধ্যে যাকে অনেক পছন্দ করি, সম্মান করি সে হলো বিরাট কোহলি। ক্রিকেট ব্যাট হাতে সে দুর্দান্ত। আর অবিশ্বাস্য রকম ফিট শরীরে তার এর চেয়েও ভালো একটা মন আছে। ওয়ার্ল্ড টি-২০তে কলকাতায় ভারতের সঙ্গে ম্যাচের পর ও আমাদের পুরো দলের সই করা জার্সি উপহার দিয়েছিল, সেটি আমার সব সময়ই মনে থাকবে। ওই শার্টটা আমার সংগ্রহশালায় খুব ভালো জায়গায় আছে। এটি আমাকে শুধু ভারতে আমার সফর আর ম্যাচের কথাই মনে করাবে না, মনে করাবে ভারতের—সবাই না হলেও—অনেক ক্রিকেটারের সঙ্গে আমার দুর্দান্ত সম্পর্কের কথা।’

একটা দুঃখও আছে আফ্রিদির। কী? এখন যে আর দুদল নিয়মিত খেলে না। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের দেখা এখন শুধু আইসিসির টুর্নামেন্টগুলোতেই মাঝে মাঝে মেলে। পূর্ণাঙ্গ দ্বিপাক্ষিক সিরিজ হয়েছে তো সেই ২০০৭ সালে (২০১২-১৩ তে হয়েছিল শুধু তিন ওয়ানডের সিরিজ)!

তবে দশ বছর আগের ওই সিরিজের নিজের ‘ভুল’ নিয়ে একটা মজার স্মৃতিও আছে আফ্রিদির। সিরিজ চলার সময়ে ভারতীয় ক্রিকেটারদের নিজের বাসায় দাওয়াত দিয়ে আতিথেয়তার সময় ভুলটা করেছিলেন। সেটিও লিখেছেন, ‘মনে পড়ে, পাকিস্তানে ভারতের একটা সফরের সময় ভারতের পুরো দলটাকে আমার করাচির বাড়িতে দাওয়াত দিয়েছিলাম। পাঠান-স্টাইলে ভারী ভারী সব খাবারও তৈরি করেছিলাম আমরা। ভেড়ার মাংস, খাসির মাংস…। কিন্তু যখন খাবার বেড়ে দেওয়া হলো, পুরো কক্ষে একেবারে চুপ হয়ে ছিল। আমার ভারতীয় বন্ধুরা একে অন্যের দিকে চাওয়া-চাওয়ি করছিল। তখন বুঝতে পারলাম, আমার সম্মানিত বন্ধুদের অনেকে এই ধরনের খাওয়ার খায় না। কয়েক জন ছিল নিরামিষভোজী। কী আর করা, তাড়াহুড়ো করে ডাল ও সবজি জাতীয় তরকারির ব্যবস্থা করেছিলাম। আমার জন্য একটু বিব্রতকরই ছিল ব্যাপারটা। অতিথিদের খাওয়ার পছন্দের ব্যাপারটা আগে থেকেই জানা উচিত ছিল। তবে আমাদের সংস্কৃতি অনেকটা একই হওয়ায় আমি আসলে ধরেই নিয়েছিলাম (ভারতের খেলোয়াড়দের খাদ্যতালিকাও একই রকমই হবে)। ভারতীয় দলের “আতিথেয়তায়” ওটা একটা মজার স্মৃতি ছিল।’

মজার ঘটনাটাই টেনে আনল তাঁর আক্ষেপ। ওই যে, দুই দলের সফর এখন আর হয় না। হতাশাটা চেপে রাখলেন না আফ্রিদিও, ‘দুঃখের ব্যাপার, এখন আমাদের আর ওরকম নিয়মিত দেখা হয় না। দুই দেশের মধ্যে বিরাজমান সম্পর্কের কারণেই এমন হচ্ছে। ভারতীয় ক্রিকেটে আমাদের বন্ধুদের সঙ্গে কাটানো সুন্দর সময়টা আমি মিস করি। আমি নিশ্চিত, ওদের অনুভূতিও একই। আশা করি, এই অবস্থাটা দ্রুত উন্নতি হবে। যাতে পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে বসে পুরোনো স্মৃতিগুলো স্মরণ করার সুযোগ আমরা পাই।’ সূত্র: আইসিসি-ক্রিকেটডটকম।