g আশুগঞ্জে শিক্ষার্থী ৮৮৩, উপস্থিত দুই | AmaderBrahmanbaria.Com – আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া

বৃহস্পতিবার, ২৬শে অক্টোবর, ২০১৭ ইং ১১ই কার্তিক, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

আশুগঞ্জে শিক্ষার্থী ৮৮৩, উপস্থিত দুই

AmaderBrahmanbaria.COM
অক্টোবর ২৪, ২০১৭

---

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ দূর্গাপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ৮৮৩ হলেও উপস্থিত হয়েছেন মাত্র দুইজন। বিগত কয়েকদিনের টানা সংঘর্ষের কারনে ছাত্রী-ছাত্রী ও অভিবাবকদের মধ্যে ফের সংঘর্ষের আশংকা দেখা দেয়ায় স্কুলে উপস্থিতি কমে গেছে। আর এতে করে স্কুলের শিক্ষকদের অলস সময় পার করতে হচ্ছে। বিভিন্ন অভিবাবকদের কাছে গিয়েও তাদের ছেলে মেয়েদের স্কুলমুখী করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে শিক্ষকরা।

এলাকাবাসী জানায়, পূর্ব শত্রুতা ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে শুক্রবার বিকালে দূর্গাপুর এলাকার জারুর বাড়ির সামসুল হকের ছেলে মহিউদ্দিনের সাথে মোল্লা বাড়ির রফিকুল ইসলামের ছেলে বোরহানের সাথে কথা কাটাকাটির নিয়ে দু‘পক্ষের লোকজন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ৩০ জন আহত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় রোববার সকাল ১১টায় উভয় পক্ষের সহস্রাধীক লোক দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে স্কুল মাঠে ও এর আশপাশের এলাকায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। পুলিশ ব্যাপক লাঠিচার্জ ও ১০ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে দুপুর ১টায় সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রনে আনে। স্কুল মাঠেই এই ধরনের সংঘর্ষ দেখে কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীসহ শিক্ষকরাও আতংকিত হয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে শিক্ষকরা তিন তলার ছাদে অবস্থান নেয়। এতে করে কোন রকমে প্রানে রক্ষা তারা।

সোমবার সকালে উপজেলার দূর্গাপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্কুল মাঠের মধ্যে সংঘর্ষে ব্যবহার করা বিভিন্ন ইটের খোয়া ও পাথরের স্তুপ সরানোর কাজ করছেন কিছু লোক। স্কুলের কোন ক্লাসেই নেই ছাত্র-ছাত্রী। অফিসে রুমে বসে আছেন ৪ জন শিক্ষিকা। প্রধান শিক্ষকসহ আরো দুজন স্কুলের পাশের বিভিন্ন অভিবাবকদের কাছে গিয়ে ধরনা দিচ্ছেন যেন তাদের বাচ্চাদের স্কুলে পাঠানো হয়। তাতেও কোন কাজ হচ্ছে না। ভরসা পাচ্ছেন না মায়েরা। আবার অনেকেই পুলিশের ভয়ে বাচ্চাদের নিয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন। পরে প্রধান শিক্ষক স্কুলে ফিরে আসলে কথা হয় তার সাথে। প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলার সময় দুজন শিক্ষার্থী স্কুলে আসেন কিন্তু তাদের অন্য সহপাঠিরা না থাকায় তারাও থাকতে চাচ্ছেন না। এই স্কুলে শিশু শ্রেনিতে ৪৩ জন, প্রথম শ্রেণিতে ১’শ ৭৫ জন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ১’শ ৮৭ জন, তৃতীয় শ্রেণিতে ১’শ ৭৩ জন, চতুর্থ শ্রেণিতে ১’শ ৫৭ জন ও পঞ্চম শ্রেণিতে রয়েছে ১’শ ৪৮ জন সহ মোট ৮৮৩ জন ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে।

স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী সিয়াম ও নূর আলম জানান, কাল স্কুলে আসার সময় স্কুলের মাঠে মারামারি দেখে ভয় পাইছি। তাই কাল আসি নাই। আজও এসে দেখি আমাদের ক্লাসে কোন ছাত্র-ছাত্রী নাই। তাই আমরাও চলে যাচ্ছি।

স্কুলের শিক্ষিকা মাসুমা বিন নূর লীমা জানান, স্কুলের মাঠে যেখাবে লোকন সংঘর্ষে নেমে পড়েছে তা আমি জীবনেও দেখি না। আমরা শিক্ষকরাই আতংকিত হয়ে পড়েছি সংঘর্ষ দেখে সেখানে ছাত্র-ছাত্রীরাতো আরো বেশী আতংকিত হয়ে পড়েছে। কোন রকমে ক্লাস থেকে শিক্ষার্থীদের নিয়ে দুতলায় এসে আশ্রয় নিয়েছি।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. সাদেকুল ইসলাম জানান, আমাদের প্রতিটা ক্লাসে অন্তত একশ থেকে দেড়শ ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। স্কুলের মাঠেই সংঘর্ষ দেখে ছাত্র-ছাত্রীর পাশাপাশি শিক্ষকরাও আতংকিত হয়ে পড়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার সকালে কোন ছাত্র-ছাত্রী ক্লাসে উপস্থিত হয়নি। পরে আমি আশপাশের অনেকের ঘরেই গিয়ে অনুরোধ করি যেন তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠায়। তারা তাতে আস্বস্ত হতে পারেন নি। পরবর্তি সংঘর্ষের আশংকায় মূলত স্কুলে শিক্ষার্থী উপস্থিত নাই। এভাবে সংঘর্ষ চলতে থাকলে এই স্কুলে শিক্ষার্থী পাওয়া কষ্টকর হয়ে যাবে।

আশুগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শাহনেওয়াজ পারভিন জানান, স্কুলে ছাত্র-ছাত্রী উপস্থিত না হওয়ার বিষয়টি আমার জানা ছিলনা। আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও স্থানীয় চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলে দেখছি কিভাবে স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতি আবার আগের মত করা যায়।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আমিরুল কায়সার জানান, সংঘর্ষ যেন না হয় এ ব্যাপার চেয়ারম্যান সহ অনেকর সাথেই কথা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা আতংকিত তাই হয়ত স্কুলে আসে নাই। আমরা এ বিষয়ে সকলের সাথে কথা বলছি। স্কুলে যেন শিক্ষার্থীরা নির্বিঘেœ আসতে পারে এবং আর কোন সহিংসতা না হয় সে কারনে এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আশা করা যায় দু একদিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

 

http://ekusheyalo.com/

এ জাতীয় আরও খবর