শুক্রবার, ৫ই অক্টোবর, ২০১৮ ইং ২০শে আশ্বিন, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

গভীর রাতে নুরুর কক্ষে ছাত্রলীগের তাণ্ডব

গভীর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক নুরুল হক নুরের কক্ষে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাণ্ডব চালিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসময় নুরুর বইখাতা বাইরে ফেলে দেয় তারা। নুরের রুমমেটকে বের করে দিয়ে নিজেদের নেতাকর্মী ওই রুমে তুলতে ছাত্রলীগ এই হামলা চালায় বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

গতকাল শনিবার (২১জুলাই) দিবাগত রাত সাড়ে বারোটা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত এই ঘটনা ঘটে। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর ও হল প্রাধ্যক্ষের হস্তক্ষেপে ছাত্রলীগ ওই কক্ষে তাদের অনুসারী না তুলেই চলে আসে।

প্রত্যক্ষদর্শীসূত্রে জানা গেছে, শনিবার রাত দিবাগত সাড়ে বারোটার দিকে ঢাবির হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আরিফ হোসেন, যুগ্ম সম্পাদক আরাফাত হোসেন জৌতিসহ অন্তত ২০ জন ছাত্রলীগকর্মী নুরুর কক্ষে (নম্বর ১১৯) যায়। তারা সবাই হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান সানীর অনুসারী বলে জানা গেছে। সেখানে গিয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা নুরুর রুমমেট নাজিমকে ওই কক্ষ থেকে বের হয়ে ১১১ নম্বর কক্ষে যেতে বলে। এসময় তারা নুরুর বইপত্র বের করে আগুন ধরিয়ে দেয়ার কথা বলে। উপস্থিত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা নুরুর বইপত্রগুলো নিয়ে হলের সিঁড়ির কাছে রাখে। পরে রাত আড়াইটার দিকে হলের সহকারী আবাসিক শিক্ষক মোহাম্মদ আইনুল ইসলাম এসে বইপত্রগুলো কক্ষের ভেতরে নিয়ে আসেন।

এ বিষয়ে নুরুর রুমমেট নাজীম বলেন, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আমার কক্ষে এসে আমাকে সেখান থেকে বের হয়ে হলের ১১১ নম্বর কক্ষে যেতে বলে। এসময় তারা নুরুর বইপত্রগুলো বের করে। এর বেশি তিনি কিছু বলতে চাননি।

হলের সহকারি আবাসিক শিক্ষক মোহাম্মদ আইনুল ইসলাম বলেন, হলের নিরাপত্তাকর্মীরা আমাকে ফোন দিয়ে বলে ১১৯ নং কক্ষে সমস্যা হচ্ছে। আমি এসে নুরুর বইগুলো বাইরে দেখতে পাই। ওই কক্ষের বাসিন্দা নাজিমকে বলি এটা তোমার বরাদ্দকৃত কক্ষ তুমি এখানেই থাকবে।

এ বিষয়ে ছাত্রলীগের মুহসীন হল শাখা সহ সভাপতি আরিফ হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নাজিমকে তার কক্ষ থেকে অন্যকক্ষে দেয়া হচ্ছিল। এজন্য তাকে ১১১ নম্বর কক্ষে যেতে বলা হয়েছে।

এ ব্যাপারে মেহেদী হাসান সানী বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, এ ঘটনা যারা ঘটিয়েছে তারা ছাত্রলীগের অতি উৎসাহী পোলাপান। তাদের খোঁজ নেয়া হচ্ছে। অভিযুক্তরা তার অনুসারী হলেও তিনি তা অস্বীকার করে বলেন, তারা আমার গ্রুপের কেউ না। হয়ত হলের সাব গ্রুপের বা প্রেসিডেন্ট গ্রুপের হতে পারে।

এ বিষয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নুর বলেন, ওরা চেয়েছিল আমার বইপত্র-সার্টিফিকেট পুড়িয়ে দিয়ে একটি আতঙ্কের সৃষ্টি করতে। যাতে আর কেউ কোটা সংস্কার আন্দোলন করতে সাহস না পায়। এ বিষয়ে তিনি প্রক্টরকে অবহিত তকরেছেন বলে জানান।

এ বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী বলেন, হল প্রশাসনের সহায়তায় প্রক্টরিয়াল টিম পাঠিয়ে বিষয়টি সমাধান করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, নুরুল হক নুর বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের ১১৯ নং কক্ষে থাকতেন। গত ৩০ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে সংবাদ সম্মেলন করার পূর্বমূহুর্তে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তার ওপর হামলা করে। তার পর থেকে তিনি আর হলে ফিরতে পারেন নি। হামলায় মারাত্মক আহত হয়ে বর্তমানে তিনি একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।