সোমবার, ২২শে অক্টোবর, ২০১৮ ইং ৭ই কার্তিক, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

ছয় বছর পর ফিক্সিংয়ের দায় স্বীকার পাকিস্তানি লেগস্পিনারের

স্পোর্টস ডেস্ক: ২০১২ সালে স্পট ফিক্সিংয়ের দায়ে ইংলিশ ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি) থেকে আজীবনের নিষেধাজ্ঞা পেয়েছিলেন পাকিস্তানের লেগস্পিনার দানিশ কানেরিয়া। সে ঘটনার ছয় বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরে ফিক্সিংয়ে নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছেন ৩৭ বছর বয়সী এ লেগস্পিনার।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে কানেরিয়া বলেন, ‘আমার নাম দানিশ কানেরিয়া এবং আমি স্বজ্ঞানে এটি স্বীকার করছি যে ২০১২ সালে আমার ওপরে ইংলিশ ক্রিকেট বোর্ডের আনা অভিযোগটি সত্য ছিল। এই দায় স্বীকার করতে আমার অনেক সাহস জমাতে হয়েছে। কারণ কেউই মিথ্যে নিয়ে জীবন অতিবাহিত করতে পারে না।’

সেসময় কানেরিয়ার এসেক্স সতীর্থ ২৩ বছর বয়সী মারভিন ওয়েস্টফিল্ড ইসিবির কাছে স্বীকার করেছিলেন যে ২০০৯ সালে ডারহামের বিপক্ষে একটি ম্যাচে নির্দিষ্ট ওভারে নির্দিষ্ট সংখ্যক রান দেয়ার শর্তে ৬০০০ পাউন্ড গ্রহণ করেছিলেন তিনি। এ ঘটনায় কারাদন্ড পর্যন্ত হয়েছিল ওয়েস্টফিল্ডের। একই ঘটনায় জেরা করা হয়েছিল কানেরিয়াকেও। তবে যথাযথ প্রমাণ না থাকায় সে দফায় পার পেয়ে যান কানেরিয়া। তবে তখন থেকেই আইসিসির নজরদারিতে ছিলেন এ লেগস্পিনার।

পরবর্তী দুই বছরে নিজের নির্দোষিতার ব্যাপারে বেশ কয়েকবার জবানবন্দি দেন কানেরিয়া। এমনকি আদালতেও এ ব্যাপারে আপিল করেন তিনি। তবু ২০১২ সালে ইসিবি তাকে আজীবনের জন্য নিষেধাজ্ঞা দেয়। পরে নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধেও আপিল করেন তিনি। কিন্তু নিজের পরে রায় আনতে পারেননি।

আল জাজিরায় দেয়া সাক্ষাৎকারে কানেরিয়া আরও বলেন, ‘২০০৫ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে থাকাকালীন আমার সহকারী ম্যানেজার আমাকে আনু ভাটের সাথে পরিচয় করায়। সে একজন হিন্দু এবং ক্রিকেটের বড় ভক্ত। এরপর আমরা যখন ২০০৮ সালে ভারত সফরে গেলাম তখন আনু ভাট আমাদের পুরো দলকেই রাতের খাবারের জন্য দাওয়াত করে। তখন আমি আমার স্ত্রী ও সতীর্থদের সাথে সেখানে যাই।’

আনু ভাটের সাথে কানেরিয়ার ঘনিষ্ঠতা বাড়তে দেখেই তাকে সতর্ক করে দিয়েছিলে আইসিসির এন্টি করাপশন ইউনিট। সে সতর্কতার তোয়াক্কা না করে ভাটের সাথে যোগাযোগ বজায় রাখেন কানেরিয়া। এ ব্যাপারে কানেরিয়া বলেন, ‘এ ব্যাপারটি আমাকে অনেক পীড়া দেয় এখন। আমি কখনোই ইসিবি বা আইসিসির কাছে অভিযোগ করিনি সে ব্যক্তির ব্যাপারে। তাদের জানতেও দেইনি যে ভাট ইংল্যান্ডেও এসে উপস্থিত হয়েছে।’

ওয়েস্টফিল্ডের সাথে মিলে ফিক্সিংয়ের ব্যাপারে কানেরিয়া বলেন, ‘ওয়েস্টফিল্ড আমাকে সবসময় বলত যে সে একজন ধনী ক্রিকেটার হতে চায়। আমি তখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার হওয়ার সুবাদে এসেক্সে অনেক টাকা পেতাম। আমার জীবন তখন বিলাসবহুলই ছিলো। এসব দেখে ওয়েস্টফিল্ড অনেক টাকা উপার্জন করতে চাইতো। আমার মনে হয় একারণেই আনু ভাট তাকে বেঁছে নিয়েছিল। আমি এসব দেখেও ওয়েস্টফিল্ডকে সতর্ক করিনি। একজন সিনিয়র ক্রিকেটার হিসেবে আমার তখন জুনিয়র ক্রিকেটারকে থামানো উচিৎ ছিল।’

কানেরিয়া আরও বলেন, ‘আমি আমার এসেক্স সতীর্থ মারভিন ওয়েস্টফিল্ড, আমার এসেক্স ক্রিকেট ক্লাব ও এসেক্সে আমার ভক্তদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করছি। আমি পাকিস্তানের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করছি। ইসিবি ও আইসিসি যদি আমাকে দ্বিতীয় সুযোগ দেয় তাহলে আমি তরুণ ক্রিকেটারদের এ অন্ধকার জীবন থেকে দূরে থাকার ব্যাপারে শিক্ষা দিতে পারি। তারা যেনো আমার মত শেষ না হয় সে ব্যাপারে তাদের সতর্ক করতে পারি।’

২০০০ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের হয়ে ৬১টি টেস্ট খেলেছেন কানেরিয়া। মাত্র ৩৪.৭৯ গড়ে তার ঝুলিতে রয়েছে ২৬১টি উইকেট। এখনো পর্যন্ত পাকিস্তানের পক্ষে সেরা স্পিনার তিনিই।