রবিবার, ১৮ই জুন, ২০১৭ ইং ৪ঠা আষাঢ়, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

জাহাজ বাড়ির অজানা যত রহস্য কথা !

AmaderBrahmanbaria.COM
সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৫

---

ভেঙে ফেলা হচ্ছে জাহাজ বাড়িখ্যাত ধানমন্ডির চিশতিয়া প্যালেস। নান্দনিক চারতলা বাড়িটি ভেঙে নির্মিত হবে বহুতল ভবন। ধানমণ্ডির লেক সংলগ্ন আকর্ষণীয় স্থাপত্যশৈলীর বাড়িটি ভেঙ্গে ফেলায় হতাশা প্রকাশ করেছেন দর্শনার্থীরা।ধানমণ্ডি আবাসিক এলাকার লেক ঘেঁষা এই বাড়িটি স্থাপত্য শিল্পের এক অপরূপ নিদর্শন। লেকে ঘুরতে আসা যে কোনো মানুষের চোখ সহজেই আটকে যায় বৈশিষ্ট্যময় লাল ইটের বাড়িটির ওপর। তবে এবার তা অতীত হতে চলেছে। ভবনটির জায়গায় গড়ে উঠবে নতুন বহুতল ভবন।

লেক সংলগ্ন ভবনের একাংশ দেবে যাওয়ার কারণেই জাহাজবাড়ি ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।

তবে নান্দনিক এক স্থাপত্যশৈলীর বিলুপ্তিতে হতাশ অনেকেই।

নব্বই দশকের শুরুতে জাহাজের আদলে গড়ে ওঠে চিশতিয়া প্যালেস। তবে লেকের জায়গা দখলের অভিযোগ রয়েছে মালিক আনোয়ারুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে। এ অভিযোগে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ভাঙা পড়ে ভবনের সীমানা প্রাচীরের কিছু অংশও। তবে সবকিছুর পরেও এ বাড়ির নাম ছড়িয়ে পড়ে মানুষের মুখে মুখে।
‘কৌতুহলের সমুদ্র’ বাংলাদেশের সর্বাপেক্ষা রহস্য বাড়ি জাহাজ বাড়ির অজানা যত রহস্য কথা !
সিটি কলেজের পাশ দিয়ে রাইফেলস স্কয়ার হয়ে সাত মসজিদ রোডে ধানমন্ডি লেকের পাশ ঘেষে খয়েরী রংয়ের ব্যতিক্রম ধরনের একটি ভবন চোখে পড়বে। আমাদের দেশের অন্যসব ভবনের গঠনের চেয়ে এই বাড়িটির গঠন একেবারেই আলাদা। চলতি পথে কারো চোখ এই বাড়িটির দিকে পড়া মাত্রই তার চোখ থমকে দাঁড়ায়। অনেকটা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের আদলে তৈরি করা বাড়িটিকে দেখে অনেকেই ভাবেন এটি কোনো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। স্বয়ং যারা নিয়মিত এই স্থানে যাওয়া আসা করেন তারাও মনে করেন এটি একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। আসলে এটি কোনো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নয়। এটি একটি বাসভবন।

সময়ের কণ্ঠস্বরের পাঠকদের জন্য আজ থাকলো রহস্যময় এই বাড়ি নিয়ে এ এইচ রানার অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ‘এক কৌতুহলের সমুদ্র জাহাজ বাড়ি’ ।

ধানমণ্ডি আবাসিক এলাকার লেক ঘেষা লাল ইটের তৈরি জাহাজ আকৃতির বাড়িটি স্থাপত্য শিল্পের এক অপরূপ নিদর্শন। আরব্য উপন্যাস অ্যারাবিয়ান নাইটসের গল্পে যাদুর বাড়ির মতো এই বাড়িটি।আলোক চিত্রীর চোখ ও ক্যামেরার লেন্স ফাঁকি দেয়া তো দুরের কথা সাধারণ মানুষের চোখ ফাঁকি দিয়েছে এই বাড়িটি এমনটি শোনা যায়নি। জিগাতলা হয়ে মোহাম্মদপুর আসতে (সাত মসজিদ রোড) বর্তমান ধানমণ্ডি ৫/এ লেকের পাড়ের এই বাড়িটি সবার নজর কাড়বে। অনেকেই বাড়িটিকে চেনে জাহাজ বাড়ি হিসেবে। বাড়িটিকে ঘিরে গড়ে ‍উঠেছে বিনোদন কেন্দ্র। তবে স্থাপত্য শৈলীর দিক দিয়ে আকর্ষণীয় হলেও বাড়িটি নিয়ে রহস্যের শেষ নেই। নিতান্ত ঢাকার স্থানীয় ও বায়োজেষ্ঠ্যরা ছাড়া কেউই সঠিক কিছু জানে না বাড়িটি সম্পর্কে। অনেকটায় আলিফ লায়লার যাদুর বাড়ির মতোই এই বাড়িটি।

ধানমণ্ডি লেকের পাড়ে বেড়াতে আসা মানুষকে জিজ্ঞেস করলে একেক জন একেক তথ্য দেন। কেউ বলে এটা একটি গির্জা, কেউ বলে এটি একটি পরিত্যাক্ত বাড়ি কোন এক পীর এখানে থাকতেন, আবার কেউ বলে এটি বিদেশি কোন সংস্থার অফিস। বাড়িটির মালিক সম্পর্কেও অবগত নন অনেকেই।

তবে অনেকেই বাড়িটির মালিকের নাম বলতে পারলেও মালিক সম্পর্কে তাদের মনে রয়েছে আরেক রহস্য। এ যেন রহস্য বাড়ির রহস্যময় পুরুষ। বাড়িতে এখন কারা বাস করছেন এমনটি অনেকেই জানেন না।তবে বাড়িটি নিয়ে হাজারো রহস্য, কল্পনা ও গুজব থাকলেও প্রকৃত ঘটনা তথ্য তেমন কেউ জানেন না।

জাহাজ বাড়ি নিয়ে সাধারণ মানুষের রহস্য:

শেরে খাজার পরিবারের অসহযোগিতার জন্য জনমনের ‘বিভ্রান্ত গুজবের’ রহস্য উন্মোচন করা সম্ভব হয়নি।

জাহাজ বাড়ি নামে খ্যাত ধানমণ্ডির ৫/এ ৬০ নম্বর বাড়িটির গেটে ইংরেজি অক্ষরে লেখা আছে Chistia Palace যা বাংলা উচ্চারণ চিশতীয়া প্যালেস। তবে অনেকেই এটিকে বলেন খিস্টিয়া প্যালেস। তবে খিস্টিয়া প্যালেস বলার পেছনে রয়েছে আরেকটি গুজব। গঠন আকৃতি ও বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে ভুল তথ্য মতে অনেকেই বাড়িকে একটি গির্জা মনে করে। ধানমণ্ডি লেকের পাড়ে ঘুরতে আসা কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের বাড়িটি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তাদের প্রত্যেকেই বাড়িটি সম্পর্কে অবগত নয় বলে জানান।

তাদের মধ্যে একজন জানালেন এক রহস্যময় তথ্য। তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, “আমার বাবার কাছ থেকে জেনেছি এটা একটা গির্জা। একজন পীর এই বাড়ির মালিক। তার সঙ্গে বিভিন্ন খ্রিস্টান পাদ্রিরা প্রায় দেখা করতে আসতেন এই বাড়িতে। তাছাড়া সাধারণ কোন মানুষ এই বাড়িতে ঢুকতে পারেন না।”

শাকিল বলেন, “এখন শুনেছি এই বাড়িটিতে কেউ থাকে না।বাড়ির মালিক সেই পীরের নামও আমি জানি না।”

জাহাজ বাড়ি তথা চিশতিয়া প্যালেস নিয়ে আগ্রহ ও কৌতুহলের সীমানা-পরিসীমানা নেই ধানমণ্ডি ঘুরতে আসা মানুষের মাঝে। যে কোন বয়সী মানুষের কাছে এযেন এক রহস্যময় বাড়ি। বাড়িটি নিয়ে রহস্য থাকার পেছনেও বেশ কিছু কারণ লক্ষ্য করা গেছে। প্রথমমত এই বাড়ির মালিক কিংবা বাড়ির অন্যান্য সদস্যদের সম্পর্কে সবাই অবগত নয়। বাড়িটির প্রধান ফটক সব সময় বন্ধ থাকে। ধানমণ্ডি আবাসিক এলাকার অন্যান্য বাড়ির মতো এই বাড়িটিতে কোন কোলাহল তো দুরে থাক কোন সাড়া শব্দও পাওয়া যায় না। আধুনিক যুগে এসেও সবার মনে বাড়িটি একটি রহস্য ঘেরা অনেকটা ভৌতিক বাড়ি।

স্থানীয় বেশ কয়েক জন বায়োজেষ্ঠ্যদের সঙ্গে বাড়িটি সম্পর্কে জানতে চাইলে তাদের কয়েকজন বাড়িটি সম্পর্কে সঠিক তথ্য দিতে পেরেছেন। এই এলাকার পুরাতন বাসিন্দা সাবেক সরকারি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, “এটার নাম জাহাজ বাড়ি না। বাড়িটার নাম চিশতিয়া প্যালেস। এই বাড়ির মালিকের নাম শের এ খাজা। তিনি আধ্যাত্মিক মানুষ ছিলেন।”

রফিকুল ইসলাম আরো বলেন, “শেরে খাজা সারা বিশ্বে খুবই জনপ্রিয় একজন ব্যক্তি ছিলেন। বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রী প্রায়ই তার সঙ্গে দেখা করতে আসতেন এই বাড়িতে।”

ধারণা করা হয় ১৯৯৩ সালে চিশতিয়া প্যালেসের নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং তা শেষ হয় ১৯৯৪ সালে। পরবর্তীতে ঢাকা সিটি করপোরেশন ধানমণ্ডি লেক সংলগ্ন বাড়িটির কিছু অংশ ভেঙ্গে পায়ে হাটা পথ তৈরি করে। এরপর বাড়ির মালিক জাহাজ আকৃতিতে বাড়িটির সীমানা প্রচীর তৈরি করেন।

কে এই শেরে খাজা?

চিশতিয়া প্যালেস তথা জাহাজ বাড়ির মালিক শেরে খাজা বাংলাদেশের সুফিবাদি মতবাদের একজন অন্যতম পুরুষ হিসেবে তথ্য পাওয়া যায়। তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির ভবিষ্যৎ বাণী করে আলোচিত হন। তার এসব ভবিষ্যৎ বাণীর অধিকাংশই সঠিক হয়েছে বলে জানা যায়। একারণে তার জনপ্রিয়তা বাংলাদেশের চাইতে বহির্বিশ্বে অনেক বেশি ছিলো। বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান ছাড়াও বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, বিদেশি সংস্থার উর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও শেরে খাজার সঙ্গে সাক্ষাত করতে তার ধানমণ্ডির এই চিশতীয়া প্যালেসে এসেছেন বিভিন্ন সময়। দেশের প্রচলিত সুফিবাদি পুরুষদের মতো তিনি কোন কানকায়ে শরীফ বা জলসার আয়োজন করতে না। কিংবা কোন মুরিদও নেই।

বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক সংকটে এই ব্যক্তিটি গোপন হস্তক্ষেপের মাধ্যমে সমাধান হয়েছে বলেও কথিত আছে ।বিভিন্ন সুত্রে গুজব আছে, ১৯৯৬ সালে বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে শেরে খাজার পরামর্শে জাতীয় পার্টির সমর্থনে আওয়ামী লীগ নাকি সরকার গঠন করে। পরবর্তী মহাজোট গঠনের পেছনেও শেরে খাজার ভূমিকা রয়েছে বলে অনেকেই ধারণা করেন এবং মহাজোটের প্রথম বৈঠক রহস্যময় এই জাহাজ বাড়িতে হয়েছিলো বলেও শোনা যায়। দেশিয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ বাণী কিংবা রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে পরোক্ষ ভূমিকা রেখে একজন শক্তিশালী পুরুষ হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করেন।

তার ভবিষ্যৎ বাণী অনুসারে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ব্যক্তি রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার জন্য শেরে খাজাকে বলা হতো ‘কিং অব কিং মেকার’।

শের-এ-খাজার জন্ম ও পরিচয়:

বাংলাদেশ ও বহির্বিশ্বে শের এ খাজা নামে পরিচিত এই আধ্যাত্মিক পুরুষের প্রকৃত নাম একেএম আনোয়ারুল হক চৌধুরী। তবে তার জন্ম তারিখ ও জন্মস্থান সম্পর্কে তেমন কোন তথ্য তার পরিবার ও নিকট জনদের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি। ২০১১ সালের ১৫ নভেম্বর সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে এই ‘আধ্যাত্মিক’ পুরুষ ইন্তেকাল করেন। তখন তার বয়স ছিলো ৫৯ বছর, সেই হিসেবে তার জন্ম ১৯৫২ সালে। তিনি রাজধানীর জগন্নাথ (বর্তমান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) কলেজ থেকে পড়ালেখা করেন। পেশাগত জীবনে তিনি ছিলেন একজন ব্যবসায়ী। গার্মেন্টস ব্যবসা ছাড়াও তিনি আবাসন ও গৃহস্থলির সামগ্রির ব্যবসায় জড়িত ছিলেন। তিনি চিশতিয়া গ্রুপ অব ইন্ডাসট্রিজের চেয়ারম্যান ছিলেন।

ব্যক্তিগত জীবনে তিনি রেহানা চৌধুরীকে বিয়ে করেন। তাদের একমাত্র পুত্র রুবেল চৌধুরী ও একমাত্র কন্যা সাদিয়া চৌধুরী।
সাবেক আমেরিকান প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের বিশেষ দূত ফ্রেঙ্ক উইসনারের সাথে নিজ বাসভবনে শের এ খাজা

সাবেক আমেরিকান প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের বিশেষ দূত ফ্রেঙ্ক উইসনারের সাথে নিজ বাসভবনে শের এ খাজা

‘আধ্যাত্মিক’ কর্মকাণ্ড: একেএম আনোয়ারুল হক চৌধুরী (শেরে খাজা) প্রখ্যাত সুফি খাজা মঈনুদ্দিন চিশতি ও খাজা গরীবে নেওয়াজের অনুসারি ছিলেন বলে জানা যায়।

শেরে খাজা প্রচলিত সুফিবাদীদের মতো কোন মুরিদ রাখতেন না বা তার কোন কর্মকাণ্ডে কোন প্রকার অর্থ বা নাজরানা গ্রহণ করতে না বলেও জানা যায়।

জানা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট বুশ, থ্যাচার, প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী, শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি প্রেমাদাসা, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নেওয়াজ শরিফ ও বেনজির ভূট্টো, মিশরের সাবেক রাষ্ট্রপতি হোসনি মুবারক, মালদ্বীপের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মামুন আবদুল গাইয়ুম, ইরাকে সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের রাজনৈতিক ক্ষমতা গ্রহণ ও বিভিন্ন রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে শেরে খাজার করা ভবিষ্যৎ বাণী সত্য হয়েছে। এছাড়া তিনি বিভিন্ন দেশের প্রকৃতিক দূর্যোগ সম্পর্কেও ভবিষ্যৎ বাণী করতেন। তার নামে তৈরি একটি ওয়েবসাইট “শের এ খাজা ডটকম” এ এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য মেলে।
সৌদি আরব সংসদের সাবেক স্পীকার এবং পবিত্র কাবা শরিফের খতিব ড. শেখ সালেহ বিন আব্দল্লাহ বিন আল হুমাইদের সাথে নিজ বাসভবনে (জাহাজ বাড়ি) শের এ খাজা

সৌদি আরব সংসদের সাবেক স্পীকার এবং পবিত্র কাবা শরিফের খতিব ড. শেখ সালেহ বিন আব্দল্লাহ বিন আল হুমাইদের সাথে নিজ বাসভবনে (জাহাজ বাড়ি) শের এ খাজা

সুফিবাদের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ বাণীর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে একেএম আনোয়ারুল হকের একটি সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। এছাড়াও তিনি ১৯৮১ বিশ্ব শান্তি ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন সংস্থা (ডব্লিউপিইডিও) নামে একটি বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) এবং চ্যারিটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।

জাতি সংঘের সরাসরি সহযোগিতায় পরিচালিত এই সংস্থাটির প্রধান কার্যালয় চিশতিয়া প্যালেস বা জাহাজ বাড়িটি। শেরে খাজা ছিলেন এই প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। এছাড়াও তিনি আন্তর্জাতিক আইন ও শান্তি কমিটি (আইএলপি) নামের আরেকটি সংস্থার চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

তার মৃত্যুর পর বর্তমানে ডব্লিউপিইডি ‘র চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন তার স্ত্রী রেহানা চৌধুরী।

শেরে খাজার জীবদ্দশায় বিভিন্ন সময় তার সঙ্গে দেখা করতে আসেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ফার্স্ট লেডি হিলারী ক্লিন্টন, প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টনের বিশেষ প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত ফ্রাঙ্ক হুইসনার, রাশিয়ার সাবেক উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী জি.ভি কারাসেনসহ মধ্যপ্রাচ্যের রাজপরিবারের বিভিন্ন সদস্য এবং পশ্চিমা দেশগুলোর বিশেষ প্রতিনিধি। এছাড়াও শেরে খাজা বিভিন্ন দেশে ভ্রমনকালে সেসব দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গেও সাক্ষাত করেন।

রহস্যে ঘেরা শেরে খাজা, জাহাজবাড়ি ও পরিবার:

বহুমাত্রিক গুনের অধিকারী এই ‘আধ্যাত্মিক’ ব্যক্তিটিকে নিয়ে দেশে বিদেশে যথেষ্ঠ কৌতুহল থাকলেও তাকে ও তার বাড়িটিকে ঘিরে মানুষের অজানার রহস্যের উন্মোচন করছেন না তার পরিবার।

বর্তমানে চিশতিয়া প্যালেসে বসবাস করছেন শেরে খাজার মা, বোন ও তার পরিবার এবং শেরে খাজার স্ত্রী রেহানা চৌধুরী।

শেরে খাজার বর্ণাঢ্য রহস্যময় জীবনে ইতি হলে নতুন করে রহস্যের সৃষ্টি করছেন তার ছেলে রুবেল চৌধুরী। শেরে খাজার একমাত্র পুত্র রুবেল চৌধুরী বৃটেনের রয়েল মেরিন একাডেমি থেকে পড়ালেখা শেষ করে পিতার ব্যবসায় যোগ দেন বলে জানা যায়। রুবেল চৌধুরী ব্যক্তিগত জীবনে নেপালের সাবেক প্রধানমন্ত্রী গিরিজা প্রসাদ কৈরালার নাতজামাই। তার শাশুড়ি নেপালের সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুজাদা কৈরালা।

বৈবাহিক সম্পর্কের বিবেচনায় রুবেল চৌধুরী নেপালের নাগরিক। বছরের অধিকাংশ সময় তিনি যুক্তরাজ্য ও নেপালে অবস্থান করেন বলেও তার পারিবারিক সুত্রে জানা যায়।

তবে অজ্ঞাত কারণে শেরে খাজার পরিবারটি লোক চক্ষুর অন্তরালে অবস্থান করতে পছন্দ করে।

শেরে খাজার জীবনীর উপর বিশেষ প্রতিবেদন করার জন্য তিন বার তার বাড়িতে যোগাযোগ করা হলে পরিবারের কেউ কথা বলতে রাজি হননি। প্রথম দিকে বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করতেও দেয়া হয়নি প্রতিবেদককে। পরবর্তী চিশতিয়া প্যালেসের নিরাপত্তাকর্মী মো. বেলাল রেহানা চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলার সুযোগ করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও পরবর্তীতে তিনি অপরাগতা প্রকাশ করেন।

এসব বেলাল বলেন, “আপনি যেন কোন মালিকের চাকরি করেন, ঠিক আমিও একজন মালিকের চাকরি করি। যদি মালিক আপনার সঙ্গে কথা বলতে রাজি না হন তাহলে আমি তাদের জোর করতে পারি না।”

তবে বর্তমানে বাড়িটিতে শেরে খাজার স্থাপিত ডব্লিউপিইডিও’র অফিস কার্যক্রম চলছে কিনা তা জানতে চাইলে বেলাল বলেন, এখানে কোন অফিস নেই। মাঝে অতীশ দীপঙ্কর বিশ্ববিদ্যালয়কে ভাড়া দেয়া হয়েছিলো এখন তারা এখানে নেই। বাড়িতে বসবাসরত কোন সদস্যের সেল ফোন কিংবা ল্যাণ্ড ফোন নম্বরও দিতে অপরাগতা প্রকাশ করেন বেলাল।

পরবর্তী এনজিও’টির ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত নম্বরগুলোতে বার বার ফোন করা হলেও কেউ তা রিসিভ করেননি।

শেরে খাজার পরিবারের অসহযোগিতার জন্য জনমনের ‘বিভ্রান্ত গুজবের’ রহস্য উন্মোচন করা সম্ভব হয়নি।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে শেরে খাজার ভূমিকা নিয়ে বর্তমান ক্ষমতাসীন জোটের বিভিন্ন নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা শেরে খাজার সঙ্গে তাদের কোন সম্পর্ক নেই বলে জানান এবং এই বিষয়ে কোন কথা বলতেও রাজি হননি। শেরে খাজার সঙ্গে তাদের এবং দলের কোন সম্পৃক্ততা নেই বলেও তারা দাবি করেন।

এ জাতীয় আরও খবর