বুধবার, ১৬ই অক্টোবর, ২০১৯ ইং ১লা কার্তিক, ১৪২৬ বঙ্গাব্দ

মামাকে নানা সাজিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি!

news-image

নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁর মান্দায় ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করে দুলাল হোসেন (৩০) নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরিতে নিয়োগ পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। গত ৬ বছর ধরে তিনি উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তার পদে বহাল থেকে সরকারি বেতন-ভাতা উত্তোলন করে আসছেন। বর্তমানে নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার উত্তরগ্রাম ইউনিয়নের বামনছাতা ব্লকে কর্মরত রয়েছেন তিনি।

এদিকে বিষয়টি প্রকাশ হওয়ার পর এলাকাজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। দুলাল নওগাঁর মান্দা উপজেলার ভালাইন ইউনিয়নের তানইল গ্রামের মোসলেম উদ্দিন মোল্লার ছেলে।

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা দাবি করেন, তার পরিবারের কেউ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি অথচ তার মামাকে নানা সাজিয়ে মুক্তিযোদ্ধার কোটায় চাকরি হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি।

উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা দুলাল হোসেনের দাদার নাম বদন উদ্দিন মোল্লা। এই বদন মোল্লার তিন ছেলে তথা মকছেদ আলী মোল্লা, মোসলেম উদ্দিন মোল্লা ও ইসলাম হোসেন মোল্লা। মোসলেম উদ্দিন মোল্লা বিয়ে করেন ভালাইন ইউনিয়নের তুড়ুকগ্রামের মকিম উদ্দিনের মেয়ে দুলুন নাহারকে। এই দম্পতির ছেলে দুলাল হোসেন। তার দাদা কিংবা নানা কেউই মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না বলে নিশ্চিত করেছেন মান্দা উপজেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আফছার আলী মন্ডলসহ স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা।

মুক্তিযোদ্ধাদের অভিযোগ, চাকরিতে নিয়োগ পাবার আগে বিভিন্ন সংস্থা কর্তৃক চাকরিপ্রার্থীর কয়েকবার ভেরিফিকেশন করা হয়। মুক্তিযোদ্ধা কোটার ক্ষেত্রে অধিক গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করে সংস্থাগুলো। এরপরও ভুয়া পরিচয়ের বিষয়টি তদন্তে কেন ধরা পড়েনি এনিয়ে প্রশ্ন তোলেন তারা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ভালাইন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও মুক্তিযোদ্ধা ইব্রাহীম আলী বাবুর বৈমাত্র বোনের ছেলে দুলাল হোসেন। চাকরি নেওয়ার সময় মামা ইব্রাহীম আলীকে নানা সাজিয়ে মুক্তিযোদ্ধার কোটায় ২০১৩ সালে ১২ আগস্ট উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তার পদে চাকরি হাতিয়ে নেন তিনি। তার প্রথম কর্মস্থল ছিল সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলা। এরপর ২০১৫ সালের ১ এপ্রিল বদলি হয়ে আসেন নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলায়। এ উপজেলায় তিনি চাকরি করেন ২ বছর ২ মাস ১৫ দিন। ২০১৭ সালের ১৫ জুন নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলায় বদলি হন। বর্তমানে এ উপজেলার উত্তরগ্রাম ইউনিয়নের বামনছাতা ব্লকে কর্মরত আছেন তিনি।

ইউপি চেয়ারম্যান ও মুক্তিযোদ্ধা ইব্রাহীম আলী বাবু জানান, ‘আমার বৈমাত্র বোনের ছেলে দুলাল হোসেন। এনজিওতে চাকরির কথা বলে আমার ছেলের নিকট থেকে মুক্তিযোদ্ধা সনদের একটি সত্যায়িত ফটোকপি হাতিয়ে নেয় ভাগ্নে দুলাল। পরবর্তীতে জানতে পারি সত্যায়িত ওই ফটোকপিতে আমাকে নানা সাজিয়ে উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা পদে চাকরি নিয়েছে। বিষয়টি অত্যন্ত লজ্জার বলেও উল্লেখ করেন তিনি।’

এ বিষয়ে উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা দুলাল হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, এ নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। ইতোমধ্যে দুদক রাজশাহী কার্যালয়ে সাক্ষাতকার দিয়েছেন উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা দুলাল হোসেন। তদন্তে অভিযুক্ত প্রমানিত হলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিডি প্রতিদিন