মঙ্গলবার, ২০শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ইং ৮ই ফাল্গুন, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

ওবায়দুল কাদেরের বিশ্রাম নেওয়ার সময় এসেছে : রিজভী

নিজস্ব প্রতিবেদক : সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে রাজনীতি অবসর নিয়ে বিশ্রাম করার সময় এসেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ।

আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন রিজভী।

রিজভী আহমেদ বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলছেন, জেলখানা আরাম আয়েশের জায়গা নয়। আবার পরক্ষণেই বলেছেন, কারাগার শান্তিতে স্বস্তিতে থাকার জায়গা। সেখানে তিনি বিশ্রাম নেবেন। ওবায়দুল কাদের যেন আইন আদালত নিয়ে জনগণের সঙ্গে তামাশা করছেন। পরষ্পরবিরোধী কথা বলাতে আওয়ামী নেতাদের জুড়ি মেলা ভার। তাহলে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে বিশ্রামের জন্য তাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে, প্রহসনের বিচারকার্য চালিয়ে, অন্যায় সাজা দিয়ে জেলে আটকিয়ে রেখেছেন কেন? এ ধরনের কথাবার্তায় মনে হচ্ছে রাজনীতি থেকে অবসর নিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকেরই বিশ্রাম নেয়ার সময় চলে এসেছে। কারণ তার কথাবার্তার মধ্যে অসংলগ্নতা দেখা যাচ্ছে।’

রিজভী আরও বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচিতে বিশ্বাসী গণতন্ত্রকামী দল বিএনপি তুমুল আন্দোলন করে স্বৈরশাসক কীভাবে উৎখাত করতে হয় তা তারা ভালভাবেই জানে। কাদের সাহেব আপনি বলেছেন, আগামী নির্বাচনে বিএনপি খালেদা জিয়াকে নিয়ে, না তাকে ছাড়া যাবে এটি আদালতের বিষয়, সরকারের বিষয় নয়। আইন, প্রশাসন, বিচার সবই আপনাদের করতলে।’

আইনমন্ত্রীর এক বক্তব্যের প্রসঙ্গে বিএনপির সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব বলেন, ‘গতকাল আইনমন্ত্রীর ভাষ্যেই প্রমাণিত হয়—খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মনের মাধুরী দিয়ে সাজানো মামলা, অন্যায় রায় এবং এখনও রায়ের কপি না দেওয়ার কলকাঠি নাড়ছে সরকার।’

এ সময় রিজভী বলেন, ‘ওবায়দুল কাদের উস্কানি দিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চাইছেন। গণতন্ত্রকামী মানুষের একমাত্র মুখপাত্র দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। ফেব্রুয়ারি মাসে যেভাবে মুখের ভাষা কেড়ে নেওয়া হয়েছিল, সেই একইভাবে বর্তমান স্বৈরশাসক উৎপীড়িত জনগণের প্রতিবাদকে বাধা দেয়ার জন্য তাদের আশা-ভরসার প্রতীক দেশনেত্রীর কণ্ঠকে রুদ্ধ করার জন্যই তাকে আটক করে রাখা হয়েছে।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘কাদের সাহেব আপনারা গণতান্ত্রিক প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক রাজনীতি ও নির্বাচন উভয়ই দিতে ব্যর্থ। সমালোচনা গণতন্ত্রের অন্তর্নিহিত শক্তি। যে দেশে বিরোধী দল সরকারকে উদ্দেশ করে কিছু বললেই জেল-জুলুম সহ্য করতে হয় সে দেশে কী তন্ত্র চালু আছে সেটি জনগণ আপনার কাছ থেকে জানতে চায়। কেউ সমালোচনা করে ফেসবুক এ কিছু লিখলেই তাকে জুজুর ভয় দেখিয়ে আটক করা হয় সেটা কী জীবিত গণতন্ত্র নাকি গণতন্ত্রের মৃতদেহ? সবার অংশগ্রহণে গণতান্ত্রিক নির্বাচনের ভয়েই দেশনেত্রীকে মিথ্যা মামলা দিয়ে আটক করা হয়েছে।’

রিজভী বলেন, ‘স্বৈরশাসকের সাথে আঁতাত করে অনুগ্রহভাজন বিরোধী দল নিয়ে কোন গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা চলে না। কোন দেশে বিরোধী দল থেকে মন্ত্রী পরিষদে মন্ত্রী থাকে? যেদেশে দুঃশাসনের নির্মমতা বজায় থাকে সেখানেই ভাঁওতাবাজীর অপশাসনে সরকারী দল বিরোধী দল একাকার হয়ে যায়। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সাহেবের কাছে জানতে চাই—কোন দেশে পত্র-পত্রিকায় সরকারের বিরুদ্ধে লেখা হলেই সেই পত্রিকা বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া হয়? ঠিক ধরেছেন, স্বৈরশাসক দ্বারা শাসিত দেশে শাসকগোষ্ঠী জনগণকে শোষণ করে, নিপীড়ন করে। জনগণ আজ সেই শোষন-পীড়নের চিত্রই অবলোকন করছে। সকলের অংশগ্রহণে প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনে অর্ধেকের বেশি আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয় না। প্রতিদ্বন্দ্বিতা, প্রতিযোগিতায় ভয় ডর আছে বলেই বিপুল ভোটে নির্বাচিত তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে আজ কারাগারে বন্দী করে রাখা হয়েছে।’

‘কাদের সাহেব আপনি বলেছেন-আদালতের আদেশের বাইরে বেগম জিয়ার বিষয়ে সরকারের কোনো হাত নেই, কোনো হস্তক্ষেপ নেই। তাহলে বিধান অনুযায়ী যে সময়সীমার মধ্যে রায়ের কপি পাওয়ার কথা, সেই রায়ের কপি এতদিন পরেও বেগম জিয়ার আইনজীবীরা হাতে পাচ্ছেন না কেন ? তাহলে মনে হয়-তার রায়ের কপি বিদেশ ভ্রমণ শেষে কারও ডিকটেশনের অপেক্ষায় রয়েছে। রায়ের কপি দিতে গড়িমসি করা জামিন বিলম্বিত করারই সরকারের কূটকৌশল। গণতান্ত্রিক দেশে জামিন মানবাধিকারের অংশ, এটি অধিকার, এটি কারো অনুগ্রহ বা দয়া নয়, সরকার কর্তৃক রায়ের কপি প্রদানে বিলম্ব শুধু মানবাধিকার লঙ্ঘনই নয়, বেগম জিয়াকে বেশিদিন কারা প্রকোষ্ঠে আটকিয়ে রাখার অশুভ ইঙ্গিত। তবে সবচেয়ে জনপ্রিয় জনগণের নেত্রীকে বন্দী করে রাখতে পারবেন না।’

সারা দেশে নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারের চিত্র তুলে ধরে রিজভী বলেন, ‘সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির সভাপতি রহমত উল্লাহ পলাশসহ পাঁচজনের অধিক নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার। ঢাকায় ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ওমর ফারুক শাকিল এবং সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরীকে গতকাল ডিবি পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। বর্তমানে কোথায় আছে কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। মুগদা থানা যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক কাজী জুয়েল পল্টনের জোনাকী হলের সামনে থেকে গ্রেপ্তার হয়েছেন। নওগাঁয় শাহ জামাল, আশরাফুল ইসলাম, নুরুল হক, ইসাহাক আলী, আনোয়ারুল ইসলাম, নোমান, জহিরুদ্দিন, আজিম, মোকছেদুল হকসহ নয়জনের অধিক নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন।’

‘যশোরে পুলিশের বন্দুক যুদ্ধে নয় ডাকাত নিহত হওয়ার পরে বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ নেতৃবৃন্দের নামে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। তার মধ্যে যশোর নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বাচ্চুসহ ফারুক হোসেন, আনছারুল হক রানা রয়েছেন। কুষ্টিয়ায় জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক এম এ শামীম আরজু গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

‘বান্দরবানে সরওয়ার জামানসহ পাঁচজনের অধিক নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন। ঢাকার কেরানীগঞ্জ বিএনপির জুয়েল মোল্লা, শফিকুল ইসলাম শাহীন, মো. আক্তার, স্বেচ্ছাসেবক দলের জাহিদুজ্জামান ভাষানী, যুবদলের রুপম, মো. সেলিম মোল্লা, মো. লিয়াকত, মো. মহিমোল্লা, ভাষানী মোল্লা, হিরা মোল্লা, ওয়াসিম মোল্লা, সাইফুল, শ্রমিক দলের আমজাদ, রফিকুল ইসলাম সোহেল, মো. আলী হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের রফিকুল ইসলাম সোহেল, কামাল হোসেন, ছাত্রদলের মিজান, মো. সালাম মোল্লা, সাবেক ছাত্রদল নেতা মো. নাসিরকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ৩০ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত ৪ হাজার ৭২৫ জনের অধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার নেতা-কর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি জানাচ্ছি।’

Print Friendly, PDF & Email