বৃহস্পতিবার, ৮ই মার্চ, ২০১৮ ইং ২৪শে ফাল্গুন, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

রাজশাহীতে মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ জনজীবন

পাপন সরকার শুভ্র, রাজশাহী : শীতের প্রকোপ কাটতে না কাটতে গত কয়েকদিন ধরে রাজশাহী নগরীতে ব্যাপক হারে বেড়েছে মশার উপদ্রব। মশার পরিমাণ এতটাই বেড়েছে যে বাসাবাড়িতে মশার কয়েল, স্প্রে, ইলেকট্রিক ব্যাট অথবা সিটি করপোরেশনের ফগার মেশিনের ধোয়া কোনো কিছুতেই কাজ হচ্ছে না। কোনো এলাকায় মশারি টাঙানোর পরেও কয়েল জ্বালাতে হচ্ছে। আবার কোথাও দিনে-দুপুরেও মশা তাড়াতে কয়েল জ্বালিয়ে রাখতে হচ্ছে। মশার হাত থেকে বাঁচতে স্বাস্থ্য ঝুঁকি জেনেও মানুষ কয়েল এবং অ্যারোসলসহ বিভিন্ন ৰতিকর রাসায়নিক পদ্ধতি ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন।

নগরবাসী অসহায়ের মতো মশাদের খাবারে পরিণত হচ্ছে। বাসিন্দাদের মতে এত মশা কখনো দেখেনি রাজশাহীর মানুষ। মশার উৎপাত রাজশাহীবাসীর কাছে নতুন নয়। তবে এ বছরের ঘটনা, হার মানিয়েছে আগের সব উদাহরণকে। বাসাবাড়ি, বিভিন প্রতিষ্ঠানে মশার উৎপাত।
নগরবাসীর অভিযোগ, মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল মশাও মারতে পারছেন না। এ কারণে বেড়েছে মশার উৎপাত। আর তাতে অতিষ্ঠ মানুষ। মশার উপদ্রব বৃদ্ধি পেলেও মশা নিধনে রাসিকের কোন কার্যক্রম দেখছে না নগরবাসি। যা নিয়ে মানুষের মধ্যে রয়েছে অসন্তোষ ও চাপা ক্ষোভ। এদিকে নগরীর নর্দমাগুলি পরিচ্ছন্ন না করায় নর্দমার বদ্ধ পানি মশা উৎপাদনের নার্সারিতে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য নগরবাসী।

তবে রাসিকের পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা শেখ মামুন ডলার জানান শিঘ্রই মশা নিধন কার্যক্রম শুরু হবে। নগরীতে মশার যে ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে তাতে মানুষ শংকিত হয়ে পড়ছে। আশ্বাসে আসা রাখতে পারছে না নগরবাসি।মানুষ মশার তান্ডব থেকে মুক্তি পেতে আশ্বাস নয় রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের প্রয়োজনীয় জর্বরী পদৰেপ কামনা করছেন নগরবাসী। কিন্তু দীর্ঘ সময় মশা নিধনে রাসিকের তেমন কোন কার্যক্রম নজরে আসছে না ।

এদিকে মশার যন্ত্রণা থেকে রক্ষা পেতে মানুষ ব্যবহার করছে কয়েল, অ্যারোসল, ভ্যাপোরাইসার, ম্যাটসহ বিভিন্ন রাসায়নিক পদ্ধতি। এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ও ক্ষতিকর দিক জেনে অথবা না জেনেই এবং অনেকটা বাধ্য হয়েই এসব ব্যবহারে বাধ্য হচ্ছেন মানুষ । দেশের সর্বত্র বিভিন্ন দোকানে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ধরন এবং ব্র্যান্ডের কয়েল, অ্যারোসল, ভ্যাপোরাইসার ও ম্যাট বিক্রি করেন ব্যবসায়ীরা।

বিভিন্ন বিজ্ঞান গবেষণাপত্রে প্রকাশিত তথ্য মতে মশা নিরোধক এসব পণ্য ব্যবহার করার সময় নির্ধারিত মাত্রা বজায় রাখতে হবে। কয়েল, ম্যাট ও ভ্যাপোরাইসার ব্যবহারের সময় ঘরের জানালা খোলা রাখতে হবে, যাতে ঘরে বিষাক্ত ধোঁয়ার আধিক্য বৃদ্ধি না পায়। অ্যারোসল ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রয়োগের সময় কক্ষ নির্দিষ্ট সময় ( প্রায় আধা ঘণ্টা) জন-মানুষ শূন্য রাখতে হবে। বাজারে যেসব কোম্পানির কয়েল, অ্যারোসল, ভ্যাপোরাইসার ও ম্যাট বেশি বিক্রি হয়, প্রায় সবগুলোরই বিজ্ঞাপন প্রদর্শিত হয় বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে। এসব বিজ্ঞাপনে মশা তাড়াতে বিভিন্ন চমকপ্রদ কথা থাকলেও স্বাস্যগত ঝুঁকি ও এর থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কিত কোনো নির্দেশনা থাকে না।গবেষণায় প্রকাশিত তথ্যমতে এসব সতর্কতা অবলম্বন না করলে এবং দীর্ঘ মেয়াদে এসব ব্যবহার করলে অ্যাজমা, অ্যালার্জি, বন্ধ্যাত্বসহ স্বাস্থ্যগত বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে শিশুরা সবচেয়ে বেশী স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।

রাজশাহী নগরীর প্রাণকেন্দ্র থেক শুরু করে এমন কোনো এলাকা নাই, যেখানে মশার উপদ্রব ছাড়া এখন মানুষ একটু শান্তিত আছে। মশার অত্যাচার যেন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। দিন নেই, রাত নেই প্রতি মুহূর্তেই চলছে মশার অত্যাচার। বাসা-বাড়ি, অফিস, খেলার মাঠ- সর্বত্রই মশা আর মশা। মশার অত্যাচারে অস্থির হয়ে উঠেছে নগরবাসী।রাজশাহীর কাদিরগন্জ এলাকার বাসিন্দা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, দিনেও মশা, রাতেও মশা। মশার যন্ত্রণায় অস্থির আছি। ভাত খেতে গেলেও মুখের মধ্যে মশা ঢুকে যাচ্ছে।

মালোপাড়া এলাকার বাসিন্দা আলি আকবর বলেন, মশারি থেকে একটু বের হলেই মশার ঝাঁক ঢুকে যাচ্ছে। পরে এক ঘণ্টা ধরে মশারির মধ্যে থাকা মশা মারতে হচ্ছে। না হলে ঘুমানোর উপায় থাকে না।সাহেব বাজার এলাকার বাসিন্দা ফরহাদ হোসেন বলেন, এর আগে এত মশা কখনো দেখিনি বলে মনে হচ্ছে। কয়েল, মশারি ও ইলেক্ট্রি ব্যাট দিয়ে মশা মেরেও কাজ হচ্ছে না।

নগরীর শিরোইল কলোনী এলাকার বাসিন্দা হযরত আলী ক্ষোভ প্রকাশ কর বলেন, এই মেয়র উন্নয়নও করতে পারে না, আবার মশাও মারতে পারে না। যার কারণে নগরবাসী এখন মশার অত্যাচারে অতিষ্ঠ।

এদিকে রাসিকের মশক নিধন দপ্তর জানায়, দুই বছর আগে রাসিক মশক নিধনের জন্য মেডিশিন কিনলেও সেটি এখন আর নাই। এ কারণে মশক নিধনেও নামতে পারছে না রাসিক। ফলে বেড়েছে মশার অত্যাচার।

Print Friendly, PDF & Email