শুক্রবার, ২৭শে জুলাই, ২০১৮ ইং ১২ই শ্রাবণ, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

কয়লা দুর্নীতি: খনির এমডিসহ ৪জনের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা

অনলাইন ডেস্ক : দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া খনির কোল ইয়ার্ড থেকে কয়লা উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনা তদন্তে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ও বাংলাদেশ তৈল গ্যাস ও খণিজ সম্পদ কর্পোরেশনে (পেট্রোবাংলা) অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কর্মকর্তারা। বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লা নিয়ে দুর্নীতি বিষয়ে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করতে দুদক কর্মকর্তারা এ দু’টি সংস্থায় অভিযান চালান।

মঙ্গলবার সকালে দুদকের অনুসন্ধান কমিটির সদস্যরা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান কার্যালয়ে এবং দুপুরে কারওয়ান বাজারে পেট্রোবাংলা কার্যালয়ে এ অভিযান চালান। দু’টি সংস্থার কাছেই কয়লার দুর্নীতি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন নথিপত্র চেয়েছেন। এমনকি দ্রুততম সময়ের মধ্যে এসব নথিপত্র সরবরাহ করতে অনুরোধ করেছেন। অপরদিকে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির দুর্নীতির অভিযোগে বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির এমডিসহ চার কর্মকর্তার বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা চেয়ে পুলিশের ইমিগ্রেশন বিভাগে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

মঙ্গলবার দুদকের পক্ষ থেকে এই চিঠি পাঠানো হয়। এ চারজন হলেন- বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হাবিব উদ্দিন আহমেদ, জেনারেল ম্যানাজার (জিএম) আবুল কাশেম প্রদানিয়া, জিএম আবি তাহের মো. নুরুজ্জামান চৌধুরী ও ডিজিএম খালেদুল ইসলাম।

এর আগে গত সোমবার দুর্নীতি দমন কমিশন এ ঘটনায় একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করে। একইসঙ্গে এই টিমকে আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে অনুসন্ধান প্রতিবেদন কমিশনে জমা দিতে বলা হয়। একইসঙ্গে ওই দিন বিকালে দুদক চেয়ারম্যানের নির্দেশে দুদকের দিনাজপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের একজন উপ পরিচালকের নেতৃত্বে দুদকের অপর একটি বিশেষ টিম বড়পুকুরিয়া কয়লাখনিতে অভিযান চালিয়েছে। তারা সেখানে গিয়ে কয়লা দুর্নীতির গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রমাণ উদ্ধার করে।

দুদক সূত্র জানায়, অনুসন্ধান টিমের তদারকি কর্মকর্তা দুদকের পরিচালক কাজী শফিকুল আলমের নেতৃত্বে উপ-পরিচালক শামসুল আলম ও দুই সদস্য সহকারী পরিচালক এ এস এম সাজ্জাদ হোসেন এবং সহকারী পরিচালক এ এস এম তাজুল ইসলাম মঙ্গলবার সকালে পিডিবির প্রধান কার্যালয়ে যান। তারা এ সময় পিডিবির চেয়ারম্যানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কয়লা দুর্নীতির ব্যাপারে কথা বলেন এবং তথ্য সংগ্রহ করেন। অপরদিকে দুদকের এই কর্মকর্তারা দুপুরে পেট্রোবাংলায় অভিযান চালান। এ সময় পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান আবুল মনসুর মো. ফয়জুল্লাহসহ সংস্থার আরও কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করেন। অনুসন্ধান কমিটির সদস্যরা পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন নথিপত্র চেয়েছেন। এমনকি দ্রুততম সময়ের মধ্যে এসব নথিপত্র সরবরাহ করতে অনুরোধ করেছেন।

দুদকের উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য বলেন, কয়লা দুর্নীতি সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে নথিপত্র তলব করা হয়েছে। এই অনুসন্ধান যাতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করার জন্য গত সোমবার থেকে অনুসন্ধান কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।

দুদক সূত্র জানায়, সম্প্রতি কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া খনি থেকে উত্তোলন করে রাখা ১ লাখ ৪৬ হাজার টন কয়লা ‘গায়েব’ হওয়ার দুর্নীতি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ পায়। এসব প্রতিবেদন আমলে নিয়ে কমিশন গত সোমবার বিশেষ বৈঠক করে এ দুর্নীতি অনুসন্ধানের জন্য অনুসন্ধান টিম গঠন করে। দুদক কর্মকর্তারা ইতোমধ্যে খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছে ক্ষমতার অপব্যবহার, জালিয়াতি, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে প্রায় ১ লাখ ১৬ হাজার টন কয়লা খোলা বাজারে বিক্রি করা হয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য ২০০ কোটি টাকা। বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাবীব উদ্দিন আহমদ ও অন্যদের বিরুদ্ধে এ টাকা আত্মসাতের প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে।

অপরদিকে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি প্রকল্পের কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে খনির মহাব্যবস্থাপক (মাইন অপারেশন) নুরুজ্জামান চৌধুরী ও উপমহাব্যবস্থাপক (স্টোর) খালেদুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী হাবিব উদ্দিন আহমদকে অপসারণ করে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়েছে। মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন ও কোম্পানি সচিব) আবুল কাশেম প্রধানিয়াকে পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড সিরাজগঞ্জে তাৎক্ষণিক বদলি করা হয়েছে। বড়পুকুরিয়া খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (অতিরিক্ত দায়িত্ব) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পেট্রোবাংলার পরিচালক আইয়ুব খানকে।